সব দূরত্ব ঘোচাতে পারে নৃত্য: মল্লিকা সারাভাই
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২২ রবিবার
মানুষে মানুষে দিন দিন বাড়ছে দূরত্ব। চেনা মুখ যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে হরহামেশাই। কঠিন এই বাস্তবতায় সহজে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর মুর্হূতগুলো। তবে এর সমাধানে ভালো কাজে দিতে পারে নৃত্য।
তিন বছর পর কলকাতার এক অনুষ্ঠানে এসে তেমনটাই জানালেন শিল্পী মল্লিকা সারাভাই।
তিনি বলেন, নাচ শুধু মঞ্চের জন্য নয়। দৈনন্দিন জীবন সুন্দর করে তুলতে পারে শিল্পের এই মাধ্যম। ঘোচাতে পারে লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনীতিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দূরত্ব।
মহামারীর কয়েক বছরে জীবন বদলে গেছে অনেকটাই। এখন কাজের ধরণও বদলেছে সাথে দূরত্ব যেন আরও বেড়েছে।
এমন সময় এই শিল্পী বলছেন, নাচ এমন একটি শিল্পমাধ্যম, যা মনে মুক্তির ভাব আনে। খোলা মনের দর্শক তাই এই শিল্পকে বেশি আপন করে নিতে পারেন।
গুণী এই শিল্পীর কাছে মুক্ত চিন্তার প্রসঙ্গ খুব কাছের। রাজনৈতিক হোক বা সামাজিক, মল্লিকাকে সব সময়েই দেখা গেছে স্বাধীন ভাবনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ঋজু মন্তব্য করতে। কোভিডের কঠিন সময়ে তার ব্যতিক্রমী কাজ হয়েছে বেশ প্রশংসিত। ৪০ পেরুনো পুরুষ, ৬৫ পার করা গৃহবধূরাও দেশের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দিয়েছেন মল্লিকার প্রতিষ্ঠান ‘দর্পণা অ্যাকাডেমি অব পার্ফর্মিং আর্টস’র ক্লাসে।
নতুন এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে উৎসাহী মল্লিকা বলেন, “আমরা আগে অনেক সময়ে চেষ্টা করেছি সকলের মধ্যে নাচ শেখার উৎসাহ বাড়াতে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে এবং জীবনযাত্রায় যে তা প্রভাব ফেলছে, তাও স্পষ্ট।”
নৃত্যশিক্ষা যে বয়ষ্কদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন মল্লিকা।
“মানসিক চাপ, উদ্বেগের মতো সমস্যা থেকে অনেক সহজে মুক্তি দিতে পারে নিয়মিত নাচের অভ্যাস। নাচ শরীর নিয়েও সহজ হতে শেখায়, নিজের শরীরকে ভালবাসতে শেখায়। আর শরীর ঘিরে অস্বস্তি যত কম থাকবে, মানসিক অস্থিরতাও কমে।”
জানা যায় নাচের সময়ে অক্সিটোসিন, ডোপামাইনের মতো পদার্থের প্রভাব শরীরের উপর বাড়ে। তাতে মন ভাল হয়। পারিপার্শ্বিক নিয়েও অস্বস্তি কাটে। নাচের গুণে আরও নানা দিক দিয়ে সুন্দর হতে পারে জীবন। যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব ঘুচতে পারে।
প্রশ্ন উঠতে পারে কীভাবে তা সম্ভব?
এই বিষয়ে মল্লিকা বলেন, “আমি ভারতের গুজরাটের ছাত্রীকে মিজোরামের নাচ শেখাই, মাহারাষ্ট্রের ছাত্রকে পুরুলিয়ার ছৌ নাচ শেখাই। এতে যে শুধু হাত-পায়ের ভঙ্গি আর মুদ্রা শিখছে, তা তো নয়। সঙ্গে অন্য একটি অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় ঘটছে।”
তিনি মনে করেন নৃত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শের দূরত্বও ঘুচতে পারে। আর ঠিক তখনই প্রশ্ন আসে, নেতারাও তবে নাচ শিখলে কি ভালো হত?
এর ব্যাখ্যায় মল্লিকা বলেন, “এমনটা হলে তো কথাই ছিল না। এই যে নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাতে ধর্ম কিংবা অঞ্চলের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। মানুষের মধ্যে দূরত্ব ছড়ায় এর ফলে। নাচ শিখলে অন্যকে বুঝতে সুবিধা তো হবেই। তাতে অবশ্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত হতে পারে।”
তার আশা, আগামীতে নৃত্যশিক্ষা আরও ছড়াবে; সমাজ সুন্দর হবে। সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
আরএমএ/এএইচএস/এমএম/