ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৭ ১৪৩১

অস্কার মঞ্চে স্মিথ কাণ্ডে আলোচিত ‘অ্যালোপিশিয়া’ রোগটি কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১২ এএম, ২৯ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৩৯ এএম, ২৯ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

নক্ষত্রদের আলোয় আলোকিত অডিটোরিয়াম স্তম্ভিত হল বিরল ঘটনায়। রেড কার্পেট হাঁটা উল্লাসের হাসি মিলিয়ে গেলো মুর্হূতে নীরবতায়। এক নক্ষত্র অন্য নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে গেল বড় বড় পায়ে, ক্ষেপে গিয়ে দিলেন চড়। হ্যা, এমনই বিরল কাণ্ডের সাক্ষী রইল অস্কারের ৯৪তম পর্ব।

৯৪তম অ্যাকাডেমি পুরস্কারের মঞ্চে স্ত্রীকে নিয়ে রসিকতার ‘শাস্তি’ হিসেবে সোজাসুজি অস্কারের মঞ্চে উঠে গিয়ে সঞ্চালক কমেডিয়ান ক্রিস রককে একটি চড় মারেন উইল স্মিথ! সদ্য অস্কার জয়ী অভিনেতার এই কাণ্ড দেখে হতবাক বিশ্ব।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চালক ক্রিস নানা ধরনের রসিকতা করছিলেন। তার মধ্যেই একটি রসিকতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট। সঞ্চালনা করতে করতেই ক্রিস বলেন, “আমি জি আই জেন-এর সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় রয়েছি।” দর্শকাসনে একেবারে সামনের সারিতে সবুজ গাউন পরিহিতা জাডা ওই মন্তব্য শুনে দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট হন। তার মুখভঙ্গিতে তা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছিল। আর তারপরই ঘটল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুর্হূত।

জানা যায়, উইল স্মিথের স্ত্রী পিনকেট স্মিথ একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালে অ্যালোপিশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার চুল ঝরে যায়। পিনকেট স্মিথ নিজেও একজন অভিনেত্রী, এখন তাকে চুলছাড়া দেখা গেলেও আগে তেমন ছিলেন না।

আর গত সোমবার হলিউডের এই জমকালো আসরে উইল স্মিথের স্ত্রী পিনকেট স্মিথের মুণ্ডিত মাথা নিয়ে রসিকতা করেছিলেন কমেডিয়ান ক্রিস কক, যা সহ্য হয়নি উইল স্মিথের। তাই তিনি চড় মেরেছিলেন, পরে অবশ্য দুঃখও প্রকাশ করেন।

চলুন দেখে নেওয়া যাক অ্যালোপিশিয়া কী ধরনের অসুখ-
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বলছে, অ্যালোপিশিয়া অরিয়াটা রোগটি তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তির দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে। আর এর ফল হিসেবে চুল ঝরে পড়ে।

অনেকেই আক্রান্ত হন এই রোগে। যে কোনও মানুষেরই প্রত্যেক দিন গড়ে ১০০টি চুল পড়ে যেতে পারে। সেটিই স্বাভাবিক নিয়ম। মাথার তালু থেকে যত চুল পড়ে, তত চুল ফের গজিয়েও যায়। কিন্তু চুল পড়া আর নতুন চুল গজানোর অনুপাত যখন সমান হয় না, তখনই চুল পাতলা হওয়া শুরু হয়। অত্যধিক চুল পড়ার নানা রকম কারণ থাকতে পারি। শারীরিক অসুস্থতা, ঘুম কম, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, পানি কম খাওয়া কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপে এমন হতেই পারে। সঠিক কারণ জানতে পারলে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপনে বদল আনতে পারলে কিছু সময় পর স্বাভাবিক নিয়মেই চুল পড়া কমে যায়। যে কোনও রকমের শারীরিক অসুস্থতা কেটে গেলেও চুল পড়া কমে যেতে পারে। কিন্তু তা না হলে সমস্যা তৈরি হয়।

এই রোগের বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে এই আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু কেন এই ভুল হয়, সেটার নিশ্চিত কারণ এখনও বের করা যায়নি। জেনেটিক কারণে কেউ যেমন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, আবার তার বাইরে পরিবেশগত কারণেও আক্রান্ত হতে পারেন।

যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের ফলিক্‌লগুলি আক্রামণ করে, তাকে বলা হয় অ্যালোপেশিয়া অ্যারেটা। মাথার তালু এবং মুখেই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। মাথার তালুতে গোল গোল চাকতির মতো চুল পড়ে টাক হয়ে যায়। কিন্তু এই রোগে অন্য কোনও রকম সমস্যা বা উপসর্গ তেমন নেই। যারা অ্যালোপেশিয়ায় আক্রান্ত, তারা এমনিতে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন।

এই সমস্যা লিঙ্গ, বয়সভেদে যে কোনও মানুষের হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা ছাড়া কোনও গতি নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স ৩০-এর গণ্ডি পেরনোর আগেই শরীরে এই সমস্যার দেখা দেয়। এছাড়া পরিবারে কারও এই রোগ থাকলে আপনারও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এই সমস্যা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। অর্থাৎ আজ প্রথম সমস্যা দেখা দিলে কিছুদিনের মধ্যে সমস্যা অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।

যা হোক, ক্রিস রকের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্মিথ বলেছেন, তার আচরণ ছিল ‘অগ্রহণযোগ্য এবং অমার্জনীয়’। 

এক বিবৃতিতে স্মিথ লিখেছেন, “আমি প্রকাশ্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে চাই, ক্রিস, আমি সীমার বাইরে এবং ভুল ছিলাম।” ওই ঘটনার পর স্মিথের ওপর নিন্দা জানান অস্কার ফিল্ম অ্যাকাডেমি। এর পরই স্মিথের কাছ থেকে এমন ঘোষণা এলো। 

নিজের ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা বিবৃতিতে উইল স্মিথ বলেন, “সব ধরনের সহিংসতা বিষাক্ত এবং ধ্বংসাত্মক।” 
সুত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
আরএমএ/ এসএ/