কেমন ছিল শরণার্থী শিবিরের দিনরাত্রি (ভিডিও)
অখিল পোদ্দার
প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ২৯ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার
একাত্তরে কেমন ছিল শরণার্থী শিবিরের দিনরাত্রি? ২৬শে মার্চ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডিসেম্বর অবদি এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে।
পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা-নির্যাতন থেকে বাঁচতে ১৯৭১ সালে ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।
নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও পোড়াও, ধর্ষণ আর নির্যাতন থেকে বাঁচতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ওপারে গিয়েছিল এপারের ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ। অগ্নিঝরা দিনে বাংলাদেশের চিত্র দেখে ওপারের শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস ঘোষ।
তিনি বলেন, “সেখানে দেখলাম কিভাবে হত্যালীলা, হত্যাযজ্ঞ পাকিস্তানীরা করেছে। মেরে বডিগুলো ঝিলের মধ্যে স্তূপাকারে করে রেখে দিয়েছে এবং তা থেকে রক্ত বেরিয়ে বেরিয়ে ঝিলের জলের রংও লাল হয়ে গেছে। যশোর দিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি পেট্রোপোল-বেনাপোল যাব বলে তখন দেখলাম প্রচুর শরণার্থী সহায়-সম্বল নিয়ে ইন্ডিয়ান বর্ডারের দিকে ছুটছে।”
একাত্তরে স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করতেন তিনি। এখনও তাঁর হৃদয় অশান্ত হয় পাকবাহিনীর নির্যাতনের চিত্র মনে করে।
মানস ঘোষ বলেন, “বিএসএফ বিরাট একটা লঙ্গরখানা খুলে খিচুরি তৈরি ওদের খাওয়াছিল। সেই প্রথম দেখা, তারপরে তো ঢল নামল। বেশির ভাগই হিন্দু শরণার্থী, কেননা তাদের টার্গেট করে পাকিস্তানি সেনারা প্রচুর হত্যা চালিয়েছে। প্রায় ৯শ’টি ত্রাণ শিবির খোলা হল। সংখ্যা এতই সাংকেতিকভাবে বাড়তে থাকল যে, যদি ৫০ হাজারের জন্য শিবির তৈরি করা হল সেখানে দেখা গেল দিনের শেষে প্রায় ১ লাখের মত লোক চলে এসেছে। সেখানে বিরাট আকারে কলেরা দেখা দিল। তার সঙ্গে ছিল চোখের রোগ। দুটো রোগ আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রচুর রোগ মারা গেল।”
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, বিহার, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল ঘরহীন বাঙালির দল। রোগে-শোকে শরনার্থী শিবিরেও মৃত্যু হয়েছে অনেকের।
মানস ঘোষ বলেন, “কিছু করার ছিল না, যে সাহায্য বিদেশ থেকে আসছিল তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই পর্যাপ্ত ছিল না। বলা হয় ১ কোটি দেড় কোটি কিন্তু আমার মতে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। খাবার দেওয়া হত কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না। ওষুধপত্র এবং জামা-কাপড় দেওয়া হত, তাও পর্যাপ্ত ছিল না।”
বিভিন্ন দেশের প্রায় দু’কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। তবে একাত্তরে এককভাবে একটি দেশ থেকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়েছিল এক কোটি বাঙালি। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই আশ্রয় নিয়েছিল ৭৫ লাখ উদ্বাস্তু।
এএইচ/