বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতে ঢুকতে বাধা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৫১ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৫৩ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার
বৈধ পাসপোর্ট ভিসা থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের মৌখিক নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশিদের স্টুডেন্ট ভিসায় ভারত যাতায়াত এখনও পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে আসতে পারছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্টুডেন্ট ভিসাধারী কোন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীকে ভারতে ঢুকতে দিচ্ছে না পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয়রা আসছেন, অথচ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঢুকতে বাধার ফলে শিক্ষা গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে সব শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়নরত ছিল তারা দেশে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পারায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় তাদের দিন কাটছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় ১০ হাজার ৩৮০ জন পাসপোর্টযাত্রী দু‘দেশের মধ্যে যাওয়া আসা করেছে। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ হাজার ২৬৭ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৯৬৪ জন ভারতীয়। আর বাংলাদেশে এসেছেন ৩ হাজার ২৮৮ জন বাংলাদেশি ও ১ হাজার ৮৫৬ জন ভারতীয়। ভারত থেকে আসাদের মধ্যে অধিকাংশই স্টুডেন্ট ভিসায়।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এ যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ রয়েছে স্টুডেন্ট। যারা দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশিরা ভারতের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। আর ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েন।
২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে যার যার দেশে ফেরেন। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ কমে এলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এতে কয়েক মাস আগেই ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেছেন। তবে সব ঠিকঠাক থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সড়ক পথে ভারতে যেতে পারছেন না। বিমান পথে যেতে তাদেরকে বলা হচ্ছে। যা সাধারণ পরিবারের কাছে কস্টসাধ্য ব্যাপার।
ভারতের দার্জিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তার পরীক্ষা ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে গেছে। সে এখন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে যেতে পারছে না। সে অভিযোগে করে বলেন, প্রতিদিন মেডিকেল, বিজনেস, এমপ্লয়ারসহ বিভিন্ন ভিসায় ভারতে লোক যাতায়াত করছে অথচ আমরা যেতে পারছি না। আমাদেরতো খুবই জরুরী। সময় মত যেতে না পারলে আবার একটি বছর পিছিয়ে যেতে হবে। লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে। আমাদের পরীক্ষার উপযুক্ত প্রমান দিলেও আমরা যেতে পারছি না।
ভারতের কাশ্মীরে পড়ুয়া বাংলাদেশি ছাত্র সৌরভ বনিক অভিষেক বড়ুয়া বলেন, তারা ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশে আসে। এরপর ডিসেম্বরের পরে যখন তারা পড়াশুনার জন্য ছুটি কাটিয়ে ভারতে যেতে চায় তখন বিপাকে পড়ে ইমিগ্রেশনে। ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভারত অনুমতি না দিলে তারা এসব স্টুডেন্ট ভিসার ছাত্রছাত্রীদের পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল মারতে পারব না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে। আমাদের ইতিমধ্যে পরীক্ষা ও শুরু হয়ে গেছে।
ভারতের কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন ও অর্ণব চৌধুরী দেব বলেন, পাসপোটর্, ভিসা ও ভ্রমণের রুট সব ঠিক থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তাকে ভারতে ঢুকতে দেয়নি। এপ্রিলে পরীক্ষা। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
দিল্লীর সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উর্মী জানান, ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই বাংলাদেশে এসে ক্লাস শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভারতে যেতে পারছে না। ভারত সরকারের কাছে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ রাখছি।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ রাজু জানান, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কোনো স্টুডেন্ট এ পথে ভারতে যেন না পাঠানো হয়। প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী চেকপোস্টে আসছেন। কিন্তু তাদের ভারতীয় ইমিগ্রেশন গ্রহণ করছে না। তবে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অনেক আগে থেকে স্বাভাবিক আসা যাওয়া করতে পারছিলেন।
তিনি বলেন, এটা ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। ভারত তাদের ইমিগ্রেশনে অনুমতি না দিলে আমরা ছাড়তে পারব না। কারন আমরা বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেও ভারত এসব শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দিবে। তবে জরুরী ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় দূতাবাস থেকে অনুমতি নেওয়া বা ঢাকা থেকে বিমানে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের বাধায় স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টে এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে আবার নিজ বাড়িতে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ এবং ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি থাকলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের গ্রহণ করতে নারাজ।
কেআই//