ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

চিকিৎসকের অবহেলায় প্রাণ গেল শিশু রাইফার

জুলফিকার আলী, কলারোয়া থেকে

প্রকাশিত : ০৮:২০ পিএম, ১ এপ্রিল ২০২২ শুক্রবার

বাবার কোলে শিশু রাইফার নিথর দেহ

বাবার কোলে শিশু রাইফার নিথর দেহ

রাইফা, সাংবাদিক (দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার) রুবেল খানের আদরের দুলালী। ছোট্ট শিশুটির গলা ব্যথা। খাবার খেতে কষ্ট হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বাবা রুবেল খান তাকে নিয়ে গেলেন চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। 

ভর্তির কারণ- স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে খাবারের ঘাটতি পূরণ। ভর্তির পর কর্তব্যরত ডাক্তার অন্য ওষুধের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক দেন। প্রথমবার এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পর রাইফার হালকা খিঁচুনি শুরু হয়। বাবা সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি ডিউটি ডাক্তারকে জানান এবং বলেন, এন্টিবায়োটিক হয়তো তার মেয়ের শরীর সহ্য করতে পারছে না। 

ডিউটি ডাক্তার তখন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে কল করার পরামর্শ দেন। কল দেয়া হয় ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে। শুক্রবার সকালে আসার কথা থাকলেও তিনি আসলেন দুপুরে। রোগী দেখলেন, কিন্তু এন্টিবায়োটিক দেয়ার পর খিঁচুনির কথা বললেও ডাক্তার কোনো জবাব দেননি। 

২২০০ টাকা ফিস নিয়ে তিনি রোগী দেখলেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই, একবার হাতটাও ধরলেন না! বাবার নানা প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে ডা. বিধান রায় চলে গেলেন। পরে মেয়ের বাবাকে নার্স জানালেন, ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর জন্য। 

সাংবাদিক বাবা তো আর ডাক্তারের চেয়ে বড় কেউ নয়। তাইতো বাবার আপত্তি সত্ত্বেও আবারও আড়াই বছরের মেয়েটাকে দেয়া হলো এন্টিবায়োটিক। পরেরবার ওষুধ খাওয়ানোর পর আর হালকা নয়, চরম খিঁচুনি দিতে লাগল ছোট্ট রাইফার একরতি শরীরটা। 

এমন খিঁচুনি হতে লাগল যে, বাচ্চাটা দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করার চেষ্টা করল। আর তাতে একটা দাঁত ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল। ছোট্ট শিশুটির মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। বিষয়টি দ্রুত ডিউটি ডাক্তার ও নার্সকে জানানো হলে তারা এসে বাচ্চাটার মুখে গজ ঢুকিয়ে দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধের চেষ্টা করল। 

তখন ডিউটি ডাক্তার ডা. বিধানের সঙ্গে কথা বললেন। ডা. বিধান রোগীকে ঘুমের ওষুধ দিতে বললেন। তখন নার্স ডিউটি ডাক্তার দেবাশীষের কাছে জানতে চাইলেন, ঘুমের ওষুধ কতটা দেবেন। ডিউটি ডাক্তার দেবাশীষ নির্দেশ দিলেন, পুরোটাই দিতে। 

নার্স তখন বললেন, ও তো শিশু। ডা. দেবাশীষ বললেন, কোনো সমস্যা নেই, এই বয়সের বাচ্চাকে এর চেয়ে বেশিও দেয়া যায়। 

অতঃপর, নার্স ডিউটি ডাক্তারের কথামতো ঘুমের ওষুধ দিলেন পুরোটাই। এরপর সব শেষ! ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল রাইফা, সাংবাদিক রুবেল খানের আদরের কন্যা। 

রাত তখন ১২টা। সাংবাদিক রুবেল খান এই বর্ণনা দিয়েছেন তার সহকর্মী ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের। চিকিৎসকদের চরম অবহেলার শিকার ছোট্ট শিশুটি! এটা কী কোনো রোগে মৃত্যু, নাকি ডাক্তারের হাতে হত্যা? 

আর এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বাঁচাতে এক ঘণ্টার মধ্যে গোটা চট্টগ্রামের সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয় বিএমএ।

এখন প্রশ্ন, একজন সাংবাদিক অন্যায় করলে অন্যরা তার দায় নেন না। একজন জজ দোষ করলে তার দায় সহকর্মীরা নেন না। একজন পুলিশ অপরাধ করলে তার দায় ডিপার্টমেন্ট নেয় না। তাহলে বিএমএ কেন কিছু ডাক্তারের অপরাধের দায় নিচ্ছে? অপরাধীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে? 

আর দুই একজন ডাক্তারের ভুলে হাজার ডাক্তার আজ চুপ কেন? তারা কি একটু সহানুভূতিও জানাতে পারেন না!

এনএস//