ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

চিনা মুরগীতে দুঃখ ঘুচল আনেছা বেগমের

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১৩ এএম, ৬ এপ্রিল ২০২২ বুধবার

দুর্ঘটনায় স্বামী পঙ্গু হওয়ার পর সংসারের অভাব পিছু ছাড়ছিলনা নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের তেড়বাড়িয়া গ্রামের আনেছা বেগমের। এমন পরিস্থিতিতে শুরু করেন চিনা মুরগী পালন। এখন তার সংসার খুব ভালভাবেই চলছে।

ভ্যানচালক স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের আয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে আনেছা বেগমের সংসার ভালোই চলতো। কিন্তু প্রায় ৫ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয় আনেছার সংসারে। 

সংসারের চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন আনেছা। স্বামী, চার ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের হাল ধরেন আনেছা বেগম। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। তার আয়ে সংসারের খরচ মেটানোসহ স্বামীর চিকিৎসাও করাতে হয়। আধপেটা খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয় তাদের। 

এরই মাঝে প্রতিবেশীদের পরামর্শে হাট থেকে একজোড়া তিতির জাতের চিনা মুরগী কিনে আনেন আনেছা। শুরু করেন চিনা মুরগী লালন পালন। ছয় মাস যেতে না যেতেই ওই চিনা মুরগী ডিম দিতে শুরু করে। ওই ডিম থেকে বাচ্চা উঠিয়ে মুরগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় বাড়িতেই চিনা মুরগীর ছোটখাটো খামার গড়ে তোলেন আনেছা বেগম। 

ওই খামারের চিনা মুরগীর ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে ভালই চলছে আনেছার সংসার। 

আনেছা বেগম জানান, তার খামারে বর্তমানে ৭০টি চিনা মুরগী আছে। গত মাসে ২৫০টি মুরগীর বাচ্চা বিক্রি করেছেন। ওই টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছেন। এই চিনা মুরগীর এক হালি ডিম ২শ’ টাকা, প্রতিটি বাচ্চা ২শ’ টাকা আর বড় এক জোড়া মুরগী ১৬শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। 

চিনা মুরগীর মাংস সুস্বাদু বলে অনেকে খামারেই কিনতে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে কিছু পাইকার ডিম, বাচ্চা, মুরগী কিনতে আসেন তার খামারে। এসব বিক্রয় করে প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন আনেছা। তাই দিয়েই চলে তার সংসার।

তবে শক্ত ঘর তৈরি করতে না পারায় মুরগী পালন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি। একারণে খামারে মুরগীর বাচ্চা ওঠানোর পরপরই তা বিক্রি করে দিতে হয় তাকে।

এই আয় দিয়ে স্বামীর চিকিৎসার পাশাপাশি এক মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালান আনেছা বেগম। দুর্ঘটনায় স্বামীর একটি হাত নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা করানোর পর সেই হাত ভাল হতে শুরু করেছে। এখন ভারি কাজ করতে না পারলেও হালকা কাজ করতে পারছেন তিনি। 

স্বামী, ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এখন ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে তার কাছে। অন্য তিন ছেলে আলাদা সংসার গড়েছে। মেয়েটা স্কুলে পড়ে। তিনি চান উচ্চ শিক্ষার জন্য তার মেয়ে শহরের ভাল স্কুলে পড়ুক। 

আনেছা বেগম বলেন, এই চিনা মুরগীর খামার করার পর থেকে তার সংসারের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছে। এখন আর খাবারের কষ্ট নেই। তবে মুরগীর খাবার ও ঘর নিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা বা সহজ কিস্তিতে ঋণ পেলে খামারটি বড় করার ইচ্ছা আছে তার।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইফতেখার বলেন, তিতির জাতের চিনা মুরগী পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসইও। দেশী মুরগীর মতই ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় বা খামার পদ্ধতিতে দুইভাবেই পালন করা যায়। তবে এই মুরগী এখনও বাজারজাতকরণের তেমন সাড়া পড়েনি। 

তিনি আরও জানান, এটাকে বাজারজাতকরণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আগ্রহীরা এই চিনা মুরগীর খামার গড়ে তুলছেন। সিংড়াতেও আনেছা বেগমের মত অনেকেই এই খামার গড়ে তুলতে এগিয়ে আসছেন। আশা করছি, তারা লাভবান হবেন। 

চিনা মুরগী পালনে আগ্রহীদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এএইচ/