হঠাৎ বেড়েছে হত্যা-টার্গেট কিলিং (ভিডিও)
রাসেল খান, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:১১ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০১:৩০ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২২ বুধবার
হঠাৎ বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, ঘটছে টার্গেট কিলিংও। গেলো তিন মাসে শুধু রাজধানীতেই ত্রিশটির বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িয়েছে উঠতি বয়সের ছেলেরা। করোনাপরবর্তী কর্মসংস্থানের অভাব, মাদকের টাকা সংগ্রহ, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানাকারণে এই হত্যাকাণ্ড।
পড়ার টেবিলে থরে থরে সাজানো বই, আর শোবার ঘরের আসববাপত্র এখন শুধুই স্মৃতি সামিয়া আফনান প্রীতির পরিবারের কাছে।
টানাপোড়েনের সংসার, তাই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার পাশে দাঁড়াবেন। ছোট্ট পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা নিমিষেই শেষ করে দিল দুর্বিত্তের ছোঁড়া এলোপাথাড়ি গুলি।
মতিঝিলের শাহজাহানপুর, জনাকীর্ণ ব্যস্ততম সড়ক। ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ্যে মুহূর মুহূর গুলির শব্দ। মারা যান মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতিও।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির রেশ না কাটতেই শাহজাহানপুরে বাসায় গিয়ে এক নারীকে হত্যা ও মিরপুরের চিকিৎসক হত্যার ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নেয়। প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে খুন হয়েছে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২ জনসহ মার্চ পর্যন্ত ত্রিরিশটির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজি, গাড়ি চুরি ও ডাকাতির মত ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, “প্রতিটি কিলিংয়ের পেছনে কিছু কারণ থাকে। কারণগুলোর মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়ার ব্যাপার, যৌন সম্পর্ক, আর্থিক ব্যাপার, দূরপাল্লার স্বার্থের ব্যাপার থাকে। এসবগুলো আগেও ছিল। মাঝে মাঝেই এটি বেশি হয়।”
গেল বছরের শেষের দিকে চুরি ও দস্যুতাও ছিল শূণ্যের কোঠায়। এখন এই সংখ্যা বেড়েছে। শুধু মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরির ঘটনায় রাজধানীতে জানুয়ারিতে ৩১টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৬টি মামলা হয়েছে।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, “কিলার ধরা পড়লে তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপরও কিলিং হয়। তাদের তাৎক্ষণিক যে চাহিদা সেই চাহিদাকে এই শাস্তির ব্যাপার থেকে বেশি মনে করেন।”
অপরাধী চক্রের হুমকি কিংবা হয়রানি এড়াতে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী মামলা বা আইনের আশ্রয় নিতে উৎসাহ বোধ করেন না। এই বাস্তবতার লক্ষণ ভালো নয়, বিশ্লেষণ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। অব্যাহত সামাজিক অবক্ষয়, নানামুখী চাপে মানুষ খুনের মত পথ বেছে নিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “তার সংসার চালানোর জন্য বা তার জরুরি কোন প্রয়োজন মেটানোর জন্য সে বেপরোয়া হয়ে কোন হত্যাকাণ্ড করে থাকে। ৩১টি হত্যাকাণ্ডের মধ্য থেকে দেখতে পাই ৩ থেকে ৫টি হত্যাকাণ্ড সেই কারণে হয়েছে। তাহলে আমি করে করি, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে।”
এই পরিস্থিতির এখনই রাস টানা না হলে আসন্ন রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে অপরাধ চিত্রের আরও অবনতি হতে পারে বলেও মনে করেন এই গবেষক।
অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করলে, দারিদ্র্য নিরসন করা না গেলে তাহলে কিন্তু এইগুলো বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে।”
এএইচ/