ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পুতিনের দুই মেয়ে সম্পর্কে যা জানা যায়

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার

দু্ই মেয়ের সাথে ভ্লাদিমির পুতিন

দু্ই মেয়ের সাথে ভ্লাদিমির পুতিন

নিজের পরিবার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে ভ্লাদিমির পুতিনকে সবসময় সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। ২০১৫ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার দুই মেয়েদের পরিচয় সম্পর্কে করা এক প্রশ্ন কায়দা করে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, "আমার মেয়েরা রাশিয়ায় থাকে এবং সবসময় রাশিয়ায়ই পড়াশোনা করেছে। আমি তাদের নিয়ে গর্বিত।"

পুতিন বলেছিলেন, "ওরা তিনটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। আমি আমার পরিবার সম্পর্কে কারো সাথে কথা বলি না। নিজের ভাগ্য গড়ার অধিকার সকল ব্যক্তির রয়েছে। তারা তাদের নিজের মতো করে জীবন যাপন করে এবং সেটি করে সম্মানের সাথে।"

তিনি হয়ত নিজের মেয়েদের নাম প্রকাশ করেন না, কিন্তু অন্যরা করেছে। যেসব রাশান নাগরিকের উপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেই তালিকায় উঠেছে ৩৬ বছর বয়সী মারিয়া ভরনস্তোভা এবং ৩৫ বছর বয়সী ক্যাটারিনা তিখোনোভা'র নাম।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি যে পুতিনের অনেক সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের নামে লুকানো রয়েছে। সেই কারণেই আমরা তাদের টার্গেট করছি।"

ভ্লাদিমির পুতিনের পরিবার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও বিভিন্ন নথিপত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর দিয়ে তার দুই মেয়ে কেমন, সে সম্পর্কে একটি ধারণা দাঁড় করানো যায়।

ভ্লাদিমির পুতিনের স্ত্রী

১৯৮৩ সালে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে থাকাকালীন বিয়ে করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার সাবেক স্ত্রী লুডমিলা। তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল তিরিশ বছর, যে সময়জুড়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার শীর্ষে উত্থান হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের।

দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সন্তানের বাবা-মা হয়েছিলেন তারা। ২০১৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এই দম্পতির।

এ নিয়ে মি. পুতিন বলেছিলেন, "আমরা দু'জনে মিলেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। আমাদের দেখা সাক্ষাৎ খুব কম হয়। আমাদের দু'জনেরই আলাদা জীবন আছে।"

আর লুডমিলা বলেছিলেন, "সে সারাক্ষণ কাজে ডুবে থাকে।"

পুতিনের বড় মেয়ে

বড় মেয়ে মারিয়া ভরনস্তোভা'র জন্ম ১৯৮৫ সালে। পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান এবং মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশুনা করেছেন। মিসেস ভরনস্তোভা এখন একজন শিক্ষাবিদ এবং কাজ করছেন এন্ডোক্রাইনোলজি বা শরীরের হরমোন ব্যবস্থা নিয়ে।

'স্টান্টেড গ্রোথ' বা শিশুদের উচ্চতা ও বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে আর একজন লেখকের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত বই রয়েছে তার। মস্কো'র এন্ডোক্রাইনোলজি রিসার্চ সেন্টারের একজন গবেষক তিনি।

একই সাথে ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত মারিয়া ভরনস্তোভা। বিবিসি রাশিয়া বলছে, বড় একটি চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে এমন একটি কোম্পানির মালিকদের একজন তিনি।

ডাচ ব্যবসায়ী ইয়োরিত ইয়োস্ত ফাসেন'র সাথে বিবাহিত তিনি। মি. ফাসেন এক সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাযপ্রমে কাজ করতেন।

যদিও এ রকম খবর রয়েছে যে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে যারা তার সাথে কথা বলেছেন তারা জানিয়েছেন যে তিনি তার বাবাকে সমর্থন করেন এবং এই যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন।

ছোট মেয়ে

বড় বোনের সাথে তুলনা করলে ক্যাটারিনা তিখোনোভাকে জনসমক্ষে অনেক বেশি দেখা যায়। তিনি একজন মেধাবী 'রক অ্যান্ড রোল' নৃত্যশিল্পী - সম্ভবত সে কারণে।

২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান নিয়েছিলেন ক্যাটারিনা তিখোনোভা এবং তার সঙ্গী। একই বছর ভ্লাদিমির পুতিনের বহুদিনের এক বন্ধুর ছেলে কিরিল শামালভকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের বিয়ের আয়োজন হয়েছিল সেইন্ট পিটার্সবার্গের একটি বিলাসবহুল স্কি রিসোর্টে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে যারা কাজ করেছেন তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সেই অনুষ্ঠানে বর-কনে এসেছিলেন বরফের উপরে টেনে নিয়ে যেতে হয় এমন গাড়ি 'স্লে' চড়ে। সেই স্লে টেনে এনেছিল তিনটি সাদা ঘোড়া।

রাশিয়ার জ্বালানি খাতে কাজের জন্য ২০১৮ সালে মি. শামালভের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বলছে, 'বিয়ের পর রাতারাতি তার ভাগ্য খুলে গিয়েছিল'। তবে পরে এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ইউক্রেনে হামলার পর একটি দামি বাড়ি দখলকারী দু'জন অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়। বাড়িটি'র মালিক মি. শামালভ।

মিজ তিখোনোভা এখন শিক্ষা এবং ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন। ২০১৮ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাকে একবার দেখা গেছে 'নিউরোটেকনোলজি' নিয়ে কথা বলতে। ২০২১ সালে একটি ব্যবসায়িক ফোরামে তাকে দেখা গিয়েছিল।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে এই দু'বারের কোনওবারেই কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

দুই মেয়ের কেউই বাবার সাথে খুব বেশি সময় কাটান না।

মি. পুতিনের নাতি রয়েছে বলেও জানা যায়। ২০১৭ সালে একবার কোন এক ফোনালাপে এ ব্যাপারে তাকে কথা বলতে শোনা গেছে। তবে তার কয়জন নাতি রয়েছে বা দুই মেয়ের মধ্যে কে তাদের মা, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।

তিনি বলেছিলেন, "আমার নাতিদের সম্পর্কে কথা হল....তাদের একজন ইতিমধ্যেই নার্সারি স্কুলে যায়। দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন, আমি চাই না তারা রাজপুত্রের মত বড় হোক। আমি চাই তারা সাধারণ মানুষের মতো বড় হোক।"

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/