ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

৫০ কলস ঢেলে মেলে ৫ কলস বিশুদ্ধ পানি

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:২০ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৩:২৩ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২২ শনিবার

বিশুদ্ধ পানি পেতে ফিল্টারে পানি ঢালছেন স্থানীয় এক গৃহবধূ

বিশুদ্ধ পানি পেতে ফিল্টারে পানি ঢালছেন স্থানীয় এক গৃহবধূ

‘টিউবওয়েলের মাথা নাই, পাশের পুকুর দিয়ে ৫০ কলস পানি ঢাইল্ল্যা দিয়া হেরপর ৫ কলস পানি নেওয়া লাগে। এই কষ্টের চেয়ে মরণ ভালো।’ এভাবেই কষ্টের কথা জানালেন শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ জিলবুনিয়া গ্রামের খাদিজা বেগম নামের মধ্যবয়সী এক নারী।

বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী জিলবুনিয়া গ্রাম। ইটের সোলিং দেওয়া রাস্তার ধারে আবু গাজীর বাড়ি। সেখানে একটি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) রয়েছে। সকাল থেকেই এখানে পানির জন্য দীর্ঘ লাইন। কারণ এলাকার অনেকগুলো নষ্টের মধ্যে এই একটি পিএসএফ আংশিক ভালো আছে। এখানে ৫০ কলস পানি ঢালতে হয় ৫ কলস বিশুদ্ধ পানি পেতে।

নাজমা বেগম নামের অপর এক নারী বলেন, সাপ্লাই নেই, টিউবওয়েল নেই, ট্যাংকি নেই, কিছুই নেই। শুধু আছে পানির জন্য হাহাকার। এক কলস পানির জন্য রোজা রেখে আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি ৩ ঘণ্টা। বর্ষার পানি সারাবছর ধরে রেখে খাওয়ার জন্য সরকারের কাছে একটি বড় ট্যাংকির দাবি জানান তিনি। 

পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা গ্রামের ফরিদ বলেন, “আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশপাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানিতে গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।”

একই চিত্র দেখা যায় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলায়। শুস্ক মৌসুমে এ এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। 

উপজেলাগুলোতে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসে না, পিএসএফগুলো নষ্ট। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূষিত পানি পান করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। 

চার মাইল হেঁটে পানি নিতে আসেন মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের শিউলী বেগম। যেতে-আসতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে তার। তিনি বলেন, “প্রতিদিন রান্না করতে ও খেতে চার কলস পানি লাগে। সকালে দুইবার পানি আনতে যাই, বিকেলে যাই দুইবার। সারাদিনে পানির জন্য চার ঘণ্টা সময় যায়, আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই।”

কচুয়া উপজেলার বারুইখালী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরেই তীব্র পানির সংকটে ভুগছি আমরা। দূরদুরান্তের পুকুর থেকে অনেক কষ্ট করে খাবার পানি আনতে হয়। এই অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, “আমাদের উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণাক্ততার কারণে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয়না। দেড় লক্ষাধিক মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু এবার একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই। ফলে মানুষের মাঝে খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে।”

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, “বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে পিএসএফ সংস্কার, পুকুর খননসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে আমরা মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা নিশ্চিত করে থাকি।”

এএইচ/