‘যমুনার পানিতে ডুইব্যা ব্যাবাক ধান শ্যাষ’
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২২ শনিবার
যমুনার চরে হঠাৎ পানি উঠে তলিয়ে যাওয়া ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কৃষক
‘এবার ধানের গোছা দেইহা ভাবছিলাম ম্যালা ধান পামু। পরিবারের সবাইকে নিয়া ভাল কইড়া চলমু। কিন্তু যমুনায় পানি বাইড়া চরের ব্যাবাক ধান ডুইব্যা গ্যাছে। এহন কি খামু, আর কিবা কইড়া চলমু।’ কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক জামাল মীরের স্ত্রী নাসিমা খাতুন (৫০)।
হঠাৎ যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে ৭ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। শনিবার সকালে কোন রকমে ১ বিঘা জমির ধান তুলে এনায়েতপুর ঘাটে এনে তা সংগ্রহ করছিলেন তিনি।
হতাশা ব্যক্ত করে নাসিমা খাতুন আরও জানান, ৭-৮ বিঘা ধান বুনেছিলাম। বিঘা প্রতি ১৪-১৫ মণ ধান পাবার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলোনা, সব শেষ। এখন আগামী দিন কিভাবে চলবে?
এদিকে, তার মত এনায়েতপুর চর, বেতিল, বিনদহ, ধুলিয়াবাড়ি, কোচগ্রামসহ আশপাশের ৫ শতাধীক কৃষকের এখন একই অবস্থা।
এনায়েতপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফরিদ আলী, আক্তার হোসেন জানান, প্রতিবছরই পানি আসে। তবে এভাবে এতো ক্ষতি হয়নি। শুধু এনায়েতপুর চরেরই অন্তত ৩শ’ বিঘা আবাদী বোরো তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০-৪০ বিঘা জমির ধান পানির নিচ থেকে কোন রকমে কিছুটা আমরা তুলতে সক্ষম হয়েছি। এতো ক্ষতি পোষানো এখন দায় হয়ে পড়েছে। সংসার চলবে কিভাবে ভেবে পাচ্ছিনা আমরা।
জানা যায়, আড়াই মাস আগে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলের কৃষকেরা পলির কাঁদায় রোপণ করেছিলেন বোরো ধান। সন্তানের মতই যত্ন নেয়ায় সুস্থ্য-সবলভাবে বেড়ে উঠে গোছাগুলোতে ধরেছিল পর্যপ্ত পরিমাণ ধান। যা ১০-১৫ দিন পড়েই গোলায় উঠতো এই কৃষকদের ঘরে। কিন্তু যমুনায় হঠাৎ অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে হাজারো একর জমির এ আবাদী ফসল।
ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত। যে কৃষক ৫০ মণ ধান ঘরে তুলবার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেখানে ৪-৫ মণও পাচ্ছেন না। অনেকটা হতাশা নিয়েই তলিয়ে যাওয়া এসব আধা পাকা ধান কোমড় পানিতে নেমে সংগ্রহ করছেন তারা।
যমুনার তীর ঘেঁসে ১১ বিঘা জমিতে আড়াই মাস আগে বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকা খরচে বেতিল চরের দরিদ্র কৃষক বুলবুল হোসেন রোপণ করেছিলেন বোরো ধানের চারা। বাম্পার ফলনের এই ধান আর কিছুদিন পরেই গোলায় তোলার কথা ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধিতে তার ধানগুলো তলিয়ে গেছে।
হতাশা নিয়ে স্বজনদের নিয়ে আধা পাকা ধানগুলো কোমড় পানিতে নেমে কাটার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এ জে এম আহসান শাহেদ সরকার জানান, চৌহালী ও শাহজাদপুরের যমুনার তীরবর্তী নিচু চরের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তা নিরুপণ করে কৃষকদের সহযোগীতার আশ্বাসের কথা জানান তিনি।
এএইচ/