ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

হিজাব পরার কারণে শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১৩ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার

নওগাঁর মহাদেবপুরে দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ‘হিজাব পরায়’ শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ তুলে হামলার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। তদন্তে হিজাব পরার কারণে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চার পৃষ্টার প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক। 

তদন্তে হিজাব পরার কারণে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে তার কোন প্রমাণ পায়নি কমিটি। তবে স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গুজব ছড়িয়ে শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষকে উসকে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তদন্তে কমিটির কাছে মনে হয়েছে স্কুলড্রেসের কারণেই গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন। 

স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। 

এছাড়া গত ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্কুলড্রেস না পরে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন। অথচ প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ শুধু শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে শোকজ করেন। এই ঘটনা তদন্ত কমিটির কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। শুধু শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে শোকজ করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রহার করায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
 
ইউএনও বলেন, তদন্ত কমিটি যেসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে এই ঘটনায় যেখানে যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন তা করা হবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী সবাইকে আমরা ডেকেছিলাম। সব কিছু শোনা এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’

মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, গত ৬ ও ৭ এপ্রিল হিজাব বিতর্কের গুজব ছড়ানো ও বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই বারবারাকপুর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া  কেউ যাতে বিশৃঙ্খল ঘটাতে না পারে সেজন্য বাড়তি নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে ওই এলাকা। 

গত ৬ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে স্কুল ড্রেস পরে না আসায় শিক্ষার্থীদের পিটানোর অভিযোগ উঠে। পরে সেটি হিজাবকাণ্ডে রুপ নিয়ে ৭ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুরসহ ওই শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। 

তাৎক্ষনিক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সোমবার রাত ৮টার দিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

এএইচ/