রুশ হামলায় কিয়েভের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২২ শুক্রবার
ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির এই কারখানাটির ওয়ার্কশপ এবং প্রশাসনিক ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সাগর থেকে নিক্ষেপ করা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় আঘাত করেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
এই কারখানায় তৈরি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধজাহাজ মস্কভা গতকাল ডুবে যায়। ১২ হাজার টনের এই যুদ্ধজাহাজ হারানোকে রাশিয়ার জন্য এক বড় বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের যে কারখানায় আঘাত করেছে সেখানে বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল তৈরি হতো। ভাইজার নামে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাটি কিয়েভের শহরতলিতে যুলিয়ানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই কারখানাকে লক্ষ্য করেই তারা তাদের ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
রাশিয়ার ঐ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই হামলার ফলে কারখানাটির দূর ও মাঝারি পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ও মেরামতের সরঞ্জাম তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি খবর দিচ্ছে, ঘটনাস্থল থেকে তাদের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন যে ইউক্রেনের এই সামরিক কারখানাটি আংশকিভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
ওই সাংবাদিক বলেছেন, ভাইজার সামরিক কারখানার ওয়ার্কশপ এবং প্রশাসনিক ভবনের গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
একটি কাঠের কাজের ওয়ার্কশপের মালিক ৪৭-বছর বয়স্ক আন্দ্রেই সিজভ এএফপিকে জানিয়েছেন, সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে রাতের বেলায়। দিবাগত রাত দেড়টা নাগাদ আমার নিরাপত্তা রক্ষী আমাকে ফোন করে জানায় যে একটা বিমান হামলা হয়েছে।
"পাঁচবার আঘাত হানা হয়েছে। আমার একজন কর্মচারী অফিসে কাজ করছিলেন। তিনি বিস্ফোরণের ধাক্কায় চেয়ার থেকে ছিটকে পড়েন," জানিয়েছেন সিজভ।
তিনি বলেন তার ধারণা ইউক্রেনের রাশিয়ার মস্কভা রণতরী আঘাত করে ডুবিয়ে দেবার বদলা নিচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেন দাবি করছে, তাদের বাহিনী মস্কভা লক্ষ্য করে নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। এই কারখানাতে নেপচুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়, যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে রুশ রণতরী ডুবিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন।
মস্কভা রণতরীটি হারানো রাশিয়ার জন্য একটা বড়ধরনের বিপর্যয় হলেও সে বিষয়ে কোনরকম উল্লেখ না করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কিয়েভের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তারা আরও জোরদার করছে কারণ তাদের লক্ষ্য ইউক্রেনের দিক থেকে রাশিয়ার মাটিতে চালানো "কোনরকম নাশকতামূলক হামলা" ঠেকানো।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়া অভিযোগ করে যে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনের হেলিকপ্টার সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
মস্কভা ডুবে যাওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ
রাশিয়ার ইতিহাস এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক অধ্যাপক এভান মডস্লি বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কোন রণতরী লড়াইয়ে ডুবে গেল।
শেষবার রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী রণতরী চেরনোভা ইউক্রাইনা ডুবিয়ে দিয়েছিল জার্মানি ৮১ বছর আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রাইমিয়ার উপকূলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া অন্য ধরনের রণতরী হারালেও ১৯৪১ সালের পর রাশিয়া এই প্রথম আবার তাদের একটি ক্রুজার রণতরী হারাল।
অধ্যাপক মডস্লি বলছেন, মস্কভা রাশিয়ান নৌবাহিনীর সবচেয়ে পুরনো জাহাজগুলির অন্যতম, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো। ১৯৮০র দশকের পর রাশিয়া এত বড় পাটাতনের নতুন কোন জাহাজ নির্মাণ করেনি।
তিনি বলছেন, যদি মস্কভা আসলেই নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্রের মত অপেক্ষাকৃত ছোট ধরনের মিসাইলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে গিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে জাহাজটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ক্ষমতা এবং ক্ষতি সামলানোর ক্ষমতা দুর্বল ছিল।
মারিউপোলের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হবার পর অবরুদ্ধ বন্দর শহর মারিউপোলে প্রথমবারের মত রাশিয়ান বাহিনী দূর পাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে বোমা নিক্ষেপ করেছে বলে বলেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অলেকসান্ডার মতুজিয়ানিক বলেছেন, রাশিয়া এখন পূর্বাঞ্চলের শহর রুবিঝনি এবং পোপাস্না এবং দক্ষিণাঞ্চলের মারিউপোল দখলের জন্য তাদের আক্রমণ সুসংহত করছে।
তিনি বলছেন, মারিউপোলে এখন রাস্তায় রাস্তায় লড়াই চলছে। যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে রাশিয়ান বাহিনী এখনও এই শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি, যদিও শহরটি তারা চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে।
তিনি আরও বলেছেন, মূল লড়াই এখন চলছে শহরের ইলিচ স্টিল অ্যান্ড আয়রন ওয়াকর্স কারখানার চারপাশে এবং বন্দর এলাকায়।
অন্যদিকে মারিউপোল শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে বিভিন্ন আবাসিক ভবনের নিচে যেসব মানুষের মৃতদেহ চাপা পড়ে আছে রুশ বাহিনী সেগুলো টেনে বের করতে শুরু করেছে।
মারিউপোল নগর পরিষদ টেলিগ্রাম চ্যানেলে অভিযোগ করেছে যে রুশরা যাদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ, এমনকি তাদের মৃতদেহও রুশ সৈন্যরা বাসিন্দাদের কবর দিতে দিচ্ছে না।
তারা বলছে, প্রত্যেকটি আবাসিক এলাকার চত্বরে তারা একজন করে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে এই নিয়ম যেন মানা হয় সেটা দেখার জন্য।
মারিউপোলে ১৩টি ভ্রাম্যমাণ লাশ দাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং শহরটির কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে রাশিয়া যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ঢাকার চেষ্টা করছে।
বিবিসি মারিউপোল কর্তৃপক্ষের এই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে সাত সপ্তাহ ধরে বিরামহীন রুশ গোলাবর্ষণে, অনাহারে এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মারিউপোলের কয়েক হাজার বাসিন্দা মারা গেছে বলে বিবিসির কাছে খবর আছে। সূত্র: বিবিসি
এসি