সেই তরুণীকে হাইকমিশনে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২ রবিবার
রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে। ওই তরুণীকে বাংলাদেশস্থ কানাডা হাইকমিশনে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
রোববার হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীকে ওই তরুণীকে কানাডিয়ান হাইকমিশনে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেয়।
একইসঙ্গে তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত। তরুণীর বাবা-মা দেখা করতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও করতে কানাডিয়ান হাইকমিশনকে বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। বাবা-মায়ের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মো. অজিউল্লাহ। আদালতে তরুণীর বাবা এবং কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের আদেশের পর চোখের জলে ১৯ বছরের মেয়েকে হাইকোর্ট থেকে বিদায় জানালেন মেয়েটির বাবা। এজলাস কক্ষে মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবা। মেয়েও জড়িয়ে ধরেন বাবাকে। ওইসময় আদালত কক্ষে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আদালতকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা বলেন, আমার মেয়ে কানাডা চলে যাচ্ছে। এতে আমার দুঃখ নেই। যেখানেই যাক আমার আদরের মেয়ে ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক- এটাই আমার চাওয়া। মেয়ের পড়াশুনা নিয়েও মাথা ব্যাথা নেই। সে যেন চিকিৎসা পায়, বেঁচে থাকুক এটাই চাওয়া।
তরুণীটি উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আমরা চাই তুমি কানাডায় ভালভাবে পড়ালেখা করে বাংলাদেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল করবে। আমরা যেন তোমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার কানাডা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার খরচ বহনসহ সব ধরণের নিরাপত্তা দেবে কানাডা সরকার।
হাইকোর্টকে লিখিতভাবে কানাডা হাইকমিশনের পক্ষে এ তথ্য জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। পরে বিচারপতিগণ এজলাস কক্ষে একান্তে তরুণীর কথা শোনেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ওই তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটে বলা হয়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। ওই দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি। মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে সবসময় বাসায় বন্দি করে রাখা হয়।
এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ডফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
এএইচ/