বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে ঢুকছে পানি, কাঁদছে কৃষক
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৩৭ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২২ সোমবার
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন হাওরের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ ও গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গলগলিয়া ও পানার হাওরের প্রায় ৩শ’ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে, গুরমার বর্ধিতাংশ এই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার ছোটবড় কয়েকটি হাওর হুমকির মুখে রয়েছে।
রোববার সকাল থেকে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে থাকে। অপরদিকে বেলা সাড়ে ৩টায় গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়।
এতে তাহিরপুর উপজেলার গলগলিয়া ও পানার হাওরে পানি ঢুকে প্রায় ৩শ” বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ফলে ডুবে যাওয়া পাকা-আধাপাকা ধান নিয়ে দিশেহারা স্থানীয় কৃষকেরা।
জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী ধরে ভারি বৃষ্টিপাতসহ শিলাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে অস্বাভিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোববার বিকালে সরেজমিনে টাঙ্গুয়াসহ গুরমার হাওর ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরের চারদিকেই উঁচু বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে।
পানার হাওরের কৃষক সাইফুল ইসলাম শেখ (৬৫) জানান, তিনি এ হাওরে ৩ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েন। ২৭নং প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তার সমস্ত জমির আধাপাকা ধান তলিয়ে গেছে।
গলগলিয়া হাওরের কৃষক শফিক নুর জানান, গলগলিয়া একটি ছোট হাওর এখানে প্রায় ৫০-৬০টি কৃষক পরিবার জমি চাষাবাদ করেন, কিন্তু গুরুমার হাওরের একটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক হাবিব মিয়া বলেন, তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরে পানি প্রবেশ করায় আমাদের সবগুলো হাওর এখন ঝুঁকিতে রয়েছে, যেকোনো সময় আমাদের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শিমুল আহমেদ বলেন, নদীতে অস্বাভিক পানি বৃদ্ধির ফলে রোববার বিকালে হঠাৎ গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে আট-দশটি গ্রামের শতশত বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে।
ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রায়হান কবির ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্প ২৭নং বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় গলগলিয়া ও পানার হাওরের প্রায় ৩শ’ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আর কিছু ধান কৃষক ইতিমধ্যে কেটে ফেলেছেন।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। ২টি হাওরেই ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, গুরমার বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং বাঁধটি কেনো ভেঙে গেছে এবং প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। বাঁধের কাজে গাফেলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৭নং প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেছে। বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলেও হয়তোবা বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে।
ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হবে বলে জানান ইউএনও।
এএইচ/