সালিশ বিপক্ষে যাওয়ায় বাবার কোলে শিশুকে হত্যা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২৭ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০৫:৪০ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২২ বুধবার
জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সালিশের রায় নিজেদের পক্ষে না হওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সন্ত্রাসীরা বাবার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু কন্যাকে গুলি করে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এর অন্যতম প্রধান আসামিসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর কারওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৩ এপ্রিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকায় বাবা আবু জাহেরের কোলে তার তিন বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূলহোতা মো. রিমনসহ পাঁচ জনকে নোয়াখালীর চর ক্লার্ক (চর জব্বর) এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় র্যাব ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে আধাঘণ্টা গুলিবিনিময় হয়।
গ্রেফতারকৃত অপর সন্ত্রাসীরা হলো— মো. সোহেল উদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (২৪), মো. সুজন (২৬), মো. নাইমুল ইসলাম (২১) ও মো. আকবর হোসেন (২৬)। তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, বেগমগঞ্জ থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাদশা এবং ফিরোজ নামের দুই প্রতিবেশির মাঝে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। মাটি কাটা নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝামেলা হয়েছে। এই বিরোধের বিষয়ে মাওলানা মো. আবু জাহের সামাজিকভাবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেন। তার সিদ্ধান্ত বাদশার বিরুদ্ধে যায়। এতে ফিরোজ ও মাওলানা আবু জাহেরের ওপর বাদশার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। তাদের দুজনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের ৪/৫ দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত রিমন, মহিন ও বাদশাসহ ৬/৭ জন মিলে মহিনের বাসার সামনে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত রিমন হত্যাকাণ্ডের জন্য ২১ হাজার টাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনে। অস্ত্রটি গ্রেফতারকৃত মাহিন যোগান দিয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৩ এপ্রিল বিকালে মাওলানা মো. আবু জাহের তার ৩ বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়াকে চকলেট ও চিপস কিনে দেওয়ার জন্য বেগমগঞ্জ থানাধীন হাজীপুর গ্রামের একটি দোকানে যায়। সেখানে আগে থেকেই রিমন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিল। এসময় রিমনসহ অন্য সন্ত্রাসীরা মাওলানা মো. আবু জাহেরকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা জাহেরের গায়ে ইট ছুড়ে মারে, ইট গিয়ে তার কোলে থাকা তিন বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়া আক্তার জান্নাতের মাথায় লাগে। এতে সে গুরুতর আহত হয়।
মাওলানা জাহের এসময় তার শিশুকন্যাকে না মারার জন্য সন্ত্রাসীদের কাছে মিনতি করতে থাকেন। মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় সন্ত্রাসী রিমন তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাবা ও মেয়েকে গুলি করে। রিমনের ছোড়া গুলিতে বাবা ও মেয়ে দুজনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুলির আঘাতে শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়ার মাথায়, পিঠে ও ঘাড়ে গুরুতর জখম হয়। এছাড়া মাওলানা জাহেরের মাথায় ও চোখে গুরুতর জখম হয়। এলাকার লোকজন তাদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় মেয়ে তাসফিয়া মারা যায়।
স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে সন্ত্রাসীরা ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।
মাওলানা মো. আবু জাহের গত ৮ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত ছিলেন। দুই মাস আগে তিনি ছুটিতে বাড়ি আসেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা এলাকার একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। গ্রেফতারকৃত রিমন এই দলের মূলহোতা। ২০১৬ সালে সে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। গ্রেফতারকৃত রিমনের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারি সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় সে এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি।’
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহেল উদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন উক্ত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ভুমিকা পালন করে থাকে। বর্ণিত ঘটনায় মাওলানা জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা, অংশগ্রহণ ও অস্ত্র ক্রয়ের অর্থ যোগান দেয়। তার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মারামারি ও হত্যার চেষ্টাসহ ৬ টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত সুজন, নাঈম ও আকবর রিমনের সহযোগী হিসেবে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। সুজনের নামে বেগমগঞ্জ থানায় ১টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আকবরের নামে বেগমগঞ্জ থানায় মারামারি ও হত্যাচেষ্টাসহ ৩টি মামলা রয়েছে।
এর আগে জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-২৪
এসি