নাহিদের স্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:২৫ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার
নিহত নাহিদের স্ত্রী ও মায়ের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিলেন তিলোত্তমা সিকদার
নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে নিহত কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হাসানের পরিবারকে সেলাই মেশিন দিয়ে শোকার্ত এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগের নেত্রী তিলোত্তমা সিকদার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে কিছু ছবি দিয়ে তাতে লেখেন,
‘নিউমার্কেটে সাদা পতাকা উড়ল, ছাত্ররা দাবী উত্থাপন করছে, ছাত্রদের দাবী মেনে নেয়ার প্রেক্ষিতে সমঝোতার চেষ্টাও চলছে তবে এই সবকিছুর মাঝে যেন আমরা কুরিয়ারকর্মী নাহিদের পরিবারকে না ভুলি॥’
তিনি আরও লেখেন, ‘পরিবার চালাতে পেটের দায়ে মাত্র ৭ হাজার টাকার বেতনে ডেলিভারি ম্যানের চাকরীর পথ বেছে নিয়েছে। পরিবারে ৩ ছেলের মধ্যে নাহিদ বড় ছেলে। আছে আরও দুইভাই, একজনের বয়স ৭, অন্যজনের বয়স ৩। নাহিদ আর ডালিয়ার প্রেমের বয়স ১ বছর আর বিয়ের বয়স ৬ মাস। নাহিদ সকাল ১০টায় যখন বাসা থেকে বের হয়, তখন ডালিয়াকে বলে গিয়েছে এসে রাতে ডালিয়াকে ঈদের শাড়ী কিনে দিতে মার্কেটে নিয়ে যাবে। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। ডালিয়া হয়ত শাড়ী পড়বে, তবে নাহিদের দেয়া নয়।’
তিলোত্তমা সিকদার লেখেন, ‘গতকাল একটি গণমাধ্যমে দেখলাম, ডালিয়া ৮ম শ্রেণি পাশ করেছে, সেলাইয়ের কাজ জানে। তাই দেখে আজ নাহিদের স্ত্রী ডালিয়া ও নাহিদের মায়ের জন্য সেলাই মেশিন নিয়ে ছুটে গেলাম কামরাঙ্গীরচরস্থ নাহিদ-ডালিয়ার বাড়িতে। মেয়েটা কিছুটা স্বাবলম্বী হোক।’
এসময় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে তাদের কথা বলিয়ে দেন এবং তিনিও অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। সেইসঙ্গে ৫৬নং ওয়ার্ডের কমিশনারের সঙ্গেও কথা বলে কিছুদিনের মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য তিলোত্তমা সিকদার এর আগেও বেশকিছু জনহিতকর কাজ করে সবার নজর কাড়েন। করোনাকালে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রমজানে ইফতার বিতরণ, অসহায় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়াসহ বহু জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।
বরিশালের মেয়ে তিলোত্তমা সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জন নিহতের ঘটনায় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কক্সবাজার সফর করেন এবং সাহায্য সহযোগিতা করে। এছাড়া এবারের নারী দিবসে তিনি বিশেষভাবে কর্মক্ষম নারীদের মাঝে অর্ধশতাধিক সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।
করোনাকালীন সংকটময় মুহূর্তে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক যুবাদের অনন্য মানবিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’প্রাপ্ত এই তরুণ নেত্রী ভবিষ্যতেই তার মানবিক কাজের ধারা অব্যাহত রাখবেন বলেই আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, ছাত্রলীগ নেত্রীর এমন জনহিতকর কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে।
এ নিয়ে সাংবাদিক মানিক মুনতাসির তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, ‘নাহিদের স্ত্রী ডালিয়ার হাতের মেহেদীর রং লাগবে সেলাই মেশিনে। হতাভাগী ১৮ বছরের তরুণী বধূ স্বামীহীন জীবন অতিবাহিত করবেন। কদিন পর আপনার আমার মত বহু পুরুষ হয়তো তাকে টিপ্পনিও কাটবে। জীবনের বিনিময়ে নাহিদের পরিবার দুটি সেলাই মেশিন পেয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী কিন্তু এখনো তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যদিও ঘোষণা দিয়েছে। ফলে তিলোত্তমা নিঃসন্দেহে একজন দয়ালু নারী। আরেক অবলা নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য সমালোচকরা এও বলতে পারেন, সরকার কেন এখনো ডালিয়ার পাশে দাঁড়াচ্ছে না!
এনএস//