ঢাকা, রবিবার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৬ ১৪৩১

বাঁধ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, আতঙ্কে রামগতি-কমলনগরের মানুষ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:১৮ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০২:৫১ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

বর্ষা ঘনিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা উপকূলে ভাঙন আতঙ্কও বাড়ছে। এ আতঙ্কে নদী থেকে একটু দূরের মানুষও এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। থেমে থেমে ভেসে আসা ঝড়ো বাতাসের শব্দ তাদের কানে যেন ভাঙন আতঙ্কের ডাক দিচ্ছে।

গেল জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের সভায় প্রায় ৩১শ’ কোটি টাকার মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নে মেঘনা এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়। এ চার মাসে যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল, তার একভাগও সম্পন্ন হয়নি। এক মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। 

নদী এলাকায় ঠিকাদারদের প্রতিনিধি ও শ্রমিকদের না দেখায় স্থানীয়দের দাবি ঠিকাদাররা ‘পালিয়েছে’।

অন্যদিকে, বর্ষার আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করলে কমলনগর-রামগতির বিস্তির্ণ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে। কমলনগর মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরণা দিচ্ছেন তারা। 

গত ১১ এপ্রিল এ উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত শত শত অসহায় মানুষ মানববন্ধন করে দ্রুত নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। এনিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেনাবাহিনী দিয়ে নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের দাবি থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ রেখে পালিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙন অব্যাহত ছিল। সামনে বর্ষা, নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে ভাঙনে কমলনগর দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

সরেজমিন উপজেলার সাহেবেরহাট হাট, কালকিনি, ফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোন কাজ চলছে না। ঠিকাদারের কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি। তবে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গেল জুন মাসে ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। 

একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৪ প্যাকেজে ১৫ জন ঠিকাদার টেন্ডারে কাজ পায়। এরমধ্যে ১৩ জন ঠিকাদারই কাজ শুরু করেন। 

তবে বালু সংকটের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শুনেছি বালু পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রেখেছেন।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চালু ছিল। চাঁদপুর থেকে বালু এনে ডাম্পিং কাজ করা হত। সেখানে বালু ব্যবস্থাপনা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ঠিকাদাররা সামায়িকভাবে কাজ বন্ধ রেখেছে। 

আমরা নতুন মাধ্যম খুঁজছি। বালু পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হবে। মে-জুন মাসে কাজ করে এবারের বর্ষায় ভাঙন রোধ করা হবে। এখন তিনজন ঠিাকাদার কাজ করছেন। বাকি ১২ জন ঠিকাদারকে দিয়েও কাজ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এএইচ/