ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

হলোকাস্ট আইন নেই, এই সুযোগে অপপ্রচার (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০২:৪১ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থামছেই না। একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় ফের প্রোপাগান্ডায় নেমেছে দেশটি। বিশ্লেষকদের মতে, শহীদের সংখ্যা কম বা বেশি দেখানোর ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দিতে বিভিন্ন দেশে হলোকাস্ট আইন থাকলেও বাংলাদেশে এখনও নেই। ফলে অপপ্রচারের দু:সাহস দেখাচ্ছে দেশের ভেতরের ও বাইরের শক্তি।

একাত্তরে মানুষ নয়, ভূমির কব্জা চেয়েছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। নয়মাস ধরেই হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছিল হানাদাররা।

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণ ঝরেছে; সম্ভ্রমহানি হয়েছে দুই লাখ মা-বোনের। অর্ধশতাব্দীর বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তে এটিই প্রতিষ্ঠিত সত্য।

তবে অপরাধের ভয়াবহতা ঢাকতে যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান বরাবরই শহীদের সংখ্যা কম দেখিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। গেলো ৯ এপ্রিল এমনই একটি আপত্তিকর নিবন্ধ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান অবজারভার। 

যেখানে শর্মিলা বসু ও ভারতীয় সাংবাদিক নির্মল সেনের বইয়ের মিথ্যাচারকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বসুর বইয়ে বলা হয়েছে, নিহত পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে। আর সেনের বইয়ে এই সংখ্যা বলা হয়েছে, আড়াই লাখ। এর মধ্যে এক লাখ বাঙালি, বাকি সবাই বিহারি।  

আবার, ক্রিশ্চিয়ান গারল্যাকের ২০১৮ সালের গবেষণার বরাতে বলা হয়েছে, এই সংখ্যা আধা মিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ এক মিলিয়ন। অর্থাৎ শহীদের সংখ্যা পাঁচ থেকে দশ লাখের মধ্যে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “গণহত্যাকারীরা সবসময়ে গণহত্যার সংখ্যাকে কমিয়ে দেখায় বা অস্বীকার করে যে তারা গণহত্যাই করেনি। এটা নতুন কিছু নয়। বিদেশে তাদের বক্তব্যটাকে গ্রহণযোগ্য করবার জন্য ভারতীয় কিছু সাংবাদিক-গবেষককে ভাড়া করেছে। পাকিস্তান একজন সাংবাদিক বলেছেন, বইটা লেখার জন্য পাকিস্তান আর্মি তাকে এক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। শর্মিলার মা বলেছে ভাড়া করেছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ১৯৭৩ সালের দিল্লি চুক্তির খেলাপ বলেও দাবি করা হয়েছে নিবন্ধে। অপারেশন সার্চলাইট গণহত্যাকে দায়মুক্তি দেবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে রাষ্ট্রবিরোধীদের দমনের নামে।

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, “আমরা বার বার সরকারকে বলেছি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করান হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণহত্যার অস্বীকার করার এই প্রক্রিয়াটা চলতে থাকবে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। প্রামান্য দলিলপত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট ও সরকারকে যদি না দেয় তাহলে পাকিস্তানের এই অপপ্রচারটা মানুষ মেনে নিবে।”

পাকিস্তানিদের এই প্রোপাগান্ডায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের দমন-পীড়ন হিসেবে দেখানো হয়েছে। যথেচ্ছভাবে অভিযোগের কাঠগড়ায় ফেলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতকেও। 

শাহরিয়ার কবির বলেন, “বিচারটা অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে যদি প্রধান গণহত্যাকারী পাকিস্তানিদেরকে বিচার না করি ও গণহত্যার জন্য দায়ী যে সংগঠনগুলো জামায়াতে ইসলাম, রাজাকার, আল-বদরদের বিচার না করি। এই বিচার প্রক্রিয়াটা তো এখনও শুরু হয়নি।”

শুধু এদেশের নয়, পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারের আওতায় আনা না গেলে এ ধরনের ষড়যন্ত্র থামানো যাবে না বলেও মত এই বিশ্লেষকের।

শাহরিয়ার কবির বলেন, “আন্ডারমাইন্ড করে কমিয়ে বলে সেটা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ ২৬টি দেশে এবং সেখানে ৬ মাস থেকে শুরু করে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা দুটোরই ব্যবস্থা আছে।”

এএইচ/