ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নওগাঁয় ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, যুবক গ্রেপ্তার

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

নওগাঁর মান্দায় শাকিলা আক্তার নামে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নিমবাড়িয়া পশ্চিম লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের এই ঘটনায় জুয়েল রানা (১৭) নামে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত শিশু শাকিলা আক্তার ওই গ্রামের সাকের আলীর মেয়ে এবং স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। পুলিশ রাতেই এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই গ্রামের আমিনুর রহমান এর ছেলে জুয়েল রানাকে আটক করেছে। 

আটক জুয়েল রানা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিশুকে ধর্ণণের পর হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। 

রোববার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান মিয়া যুবকের স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের বেশকিছু আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, শিশুটিকে কৌশলে বাঁশঝাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে বখাটে জুয়েল রানা। 

এদিকে নিহত শাকিলার পিতা সাকের আলী জুয়েলকে অভিযুক্ত করে রোববার মান্দা থানায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ওইদিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।

পুলিশ জানায়,  শনিবার বিকেল ৪টার দিকে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সন্ধ্যালগ্নে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

শিশু শাকিলার সহপাঠী জুনায়েদ হোসেন ও তাওহিদ ইসলাম জানায়, শনিবার বিকেলে শাকিলাসহ তারা কয়েক বন্ধু মিলে খেলাধুলা করছিল। পরে তারা বাড়ি চলে গেলে শাকিলা একাই সেখানে থেকে যায়। যাওয়ার সময় ওই বাঁশঝাড়ের কাছে জুয়েল রানাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। এরপর থেকে শাকিলাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানায় শিশুরা।

নিহতের মা রাজিয়া সুলতানা জানান, ‘প্রতিবেশি আব্দুল বারীর বাড়িতে মিলাদের অনুষ্ঠান চলছিল। মিলাদের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন গ্রামের লোকজন। অনুষ্ঠানে আশপাশের শিশুরাও ছোটাছুটি করছিল। শাকিলাও তাদের সঙ্গে ছিল। এ জন্য তাকে চোখে চোখে রাখার তেমন প্রয়োজন মনে করিনি। সামান্য এ অবহেলায় নাড়িছেঁড়া ধনকে আজ হারাতে হলো। আমি জুয়েলের ফাঁসি চাই।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হারুন-অর-রশীদ বলেন, শনিবার বিকেল ৪টার পর হঠাৎ করেই শিশুটি নিখোঁজ হয়। তাকে মিলাদ বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় ইফতারের সময় মিলাদ বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ে শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। শিশুটি সেখানে নগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল। মুখে ঢোকানো ছিল কাপড়। অবস্থা দেখে শিশুটির সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে বলেও ধারণা করেছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে মান্দা উপজেলার নিমবাড়িয়া পশ্চিম লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের একটি বাঁশঝাড় থেকে ছয় বছর বয়সী একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে রাতেই শিশুটিকে হত্যার অভিযোগে জুয়েল নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের কাছে দেয়া প্রাথমিক জবানবন্দিতে ওই যুবক শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন অন্য শিশুদের সঙ্গে শাকিলা গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশেই খেলছিল। এ সময় প্রতিবেশী আমিনুলের ছেলে জুয়েল ওই বাঁশঝাড়ে বাঁশের কঞ্চি কাটছিল। অন্য শিশুরা বিকাল ৩টার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলে, জুয়েল ওই শিশুটিকে কৌশলে ডেকে নিয়ে বাঁশঝাড়ের পাশে অবস্থিত খড়ের পালার পাশে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটির রক্তক্ষরণ হলে সে কান্নাকাটি করে এবং বিষয়টি বাবা-মাকে বলে দিতে চায়। ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে জুয়েল শিশুটির প্যান্টের কিছু অংশ ছিঁড়ে তার মুখে গুজে দিয়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঝোপের মধ্যে বাঁশের পাতা ও কঞ্চি দিয়ে নিহত শিশুকে লুকিয়ে রাখে। শিশুটির প্যান্টের বাকি অংশ পাশের আত্রাই নদীর তীরে ফেলে দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাঁশঝাড়ের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটির মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রাতেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধী জুয়েলকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কয়েকশ গ্রামবাসীর সামনেই গ্রেপ্তারকৃত জুয়েল স্বীকারোক্তি প্রদান করে। পরে তার দেখানো স্থান থেকে প্যান্টের ছেড়া অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এনএস//