শর্তসাপেক্ষে সিঙ্গাপুরের নারীরা ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে পারবেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:১১ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার
সিঙ্গাপুর ঘোষণা দিয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই এখন থেকে চাইলে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে পারবেন সেখানকার নারীরা। অনেকে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন, এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য কিছু সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
গোয়েনডোলিন ট্যান সিঙ্গাপুরের কর্মজীবী সিঙ্গেল নারী। তিনি সব সময় তার নিজের বায়োলজিক্যাল সন্তান থাকুক এটা চেয়েছেন। কিন্তু ৩১ বছর বয়সেও তার কোনো সঙ্গী হয়নি।
তাই তার সন্তান নেওয়ার চাওয়া পূরণে সবচেয়ে ভালো সমাধান হিসাবে ডিম্বাণু সংরক্ষণকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। এ জন্য ৩১ বছর বয়সে তিনি বিমানে চড়েন এবং হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যান। যেখানে ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেন তিনি।
গোয়েনডোলিন বলেন, এটা করা খুব ব্যয়বহুল। ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে তাকে ১০,৯৩২ মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি এবং সিঙ্গাপুরের আরও অনেক নারী যারা ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে চান-তাদের একমাত্র উপায় বিদেশ গিয়ে তা সংরক্ষণ করা। কারণ সিঙ্গাপুরে ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিষিদ্ধ।
২০২০ সালে দেশটির সামাজিক এবং পারিবারিক উন্নয়ন (মিনিস্ট্রি অব সোসাল অ্যান্ড ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট, এমএসএফ) মন্ত্রণালয় ডিম্বাণু সংরক্ষণকে বৈধতা না দেওয়ার ব্যাপারে বলে, ডিম্বাণু সংরক্ষণকে বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নৈতিক এবং সামাজিক উদ্বিগ্নতাকেও তাদের বিবেচনায় নিতে হয়েছে।
যদিও গত মাসে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি এবং ঘোষণা করে, ২০২৩ সাল থেকে ২১-৩৫ বছর বয়সী সিঙ্গেল নারীকে তাদের ডিম্বাণু সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এর সঙ্গে কিছু শর্তাবলীও জুড়ে দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে রয়েছে- সিঙ্গেল নারী তাদের সংরক্ষিত ডিম্বাণুগুলো কেবল তখনই ব্যবহার করতে পারবেন যখন তারা বৈধভাবে বিবাহিত হবেন।
আর এই শর্তাবলী তাৎক্ষণিকভাবে সেইসব সিঙ্গেল নারীদের ডিম্বাণু সংরক্ষণের সুযোগের বাইরে ঠেলে দিয়েছে, যারা বিয়ের বাইরে গিয়ে সন্তান জন্ম দিতে চান। সিঙ্গেল নারীদের পাশাপাশি এটি সমকামী যুগলদের জন্যও বাধা তৈরি করেছে, কারণ সিঙ্গাপুরের আইনে সমকামীরা বিয়ে করতে পারেন না।
বিশ্বব্যাপী ডিম্বাণু সংরক্ষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ‘এগ ফ্রিজিং’ নামে পরিচিত এই ডিম্বাণু সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি সিঙ্গেল নারীরা এই জন্য গ্রহণ করেন যেন ইচ্ছামতো সন্তান ধারণের জন্য তা কাজে লাগানো যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে এই পদ্ধতিকে ওয়েবসাইটে ক্রিয়োপ্রিজারভেশন বলা হয়। সাধারণভাবে আগে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব হিসেবে পরিচিত শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ ছাড়া ক্যানসার আক্রান্ত বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতার ক্ষেত্রেও নারীরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় দেরিতে সন্তান নিতে চান এমন নারীদের মধ্যেও এই পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে কম বয়সে নারীর প্রজনন সক্ষমতা ভালো থাকা অবস্থাতেই ডিম্বাণু নিয়ে তা মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রির মতো তাপমাত্রায় বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় এবং সুবিধাজনক সময় শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।
সোসাইটি ফর অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলোজির হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৪৭৫ জন নারী তাদের ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩,২৭৫ জনে, বাড়ার হারে যা ২৫০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি।
সূত্র: বিবিসি
এসবি/