ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌঘাঁটি পাহারায় ডলফিন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ১ মে ২০২২ রবিবার

ইউক্রেনের হামলা থেকে কৃষ্ণসাগরে নিজেদের নৌসেনা ঘাঁটি বাঁচাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডলফিনদের পাহারায় রেখেছে রাশিয়া। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। উপগ্রহচিত্রেও সেই ছবি ধরা পড়েছে।

কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি হল সেভাসটোপোল।

বেশ কয়কেটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চালানোর পর থেকেই সেভাসটোপোল নৌঘাঁটিতে ডলফিনের দু’টি দলকে মোতায়েন করেছে রাশিয়া।

নৌঘাঁটিতে থাকা রণতরীগুলিকে সমুদ্রের নীচ থেকে হামলার হাত থেকে বাঁচাতেই নাকি এই ডলফিনের দলকে মোতায়েন করা হয়েছে। সেভাসটোপোল বন্দরে ঢোকার কিছুটা আগে সর্ব ক্ষণ কড়া নজর রাখছে রুশ ডলফিন।

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে যে, সেভাসটোপোল নৌঘাঁটিতে একাধিক যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে রাশিয়া। আমেরিকার ন্যাভাল ইনস্টিটিউটও সেই ছবি পর্যালোচনা করে বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হামলাকারী জাহাজ মস্কোভা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ইউক্রেন বাহিনীর গোলায়। তাই রাশিয়া আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আকাশ এবং স্থলপথে ইউক্রেনের হামলা রুখে দিতে পারলেও সমুদ্রের নীচ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যাতে যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্যই এই ব্যবস্থা বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলিতে।

সমুদ্রের নীচ দিয়ে ইউক্রেনের সাঁতারু বাহিনী এসে হামলা চালাতে পারে। এমন একটা আশঙ্কাও রয়েছে। কোনও সাঁতারুকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে রুশ বাহিনীকে সতর্ক করবে ডলফিনগুলি।

সেনাবাহিনীর কাজে ডলফিনকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া অবশ্য রাশিয়ায় প্রথম নয়। এর একটি ইতিহাস আছে। শত্রুপক্ষের ডুবুরিকে চিহ্নিত করা বা সমুদ্রে নীচে কোনও বিস্ফোরক এমনকি কোনও বস্তুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ডলফিনগুলিকে।

ষাটের দশক থেকে এই সামুদ্রিক প্রাণীকে সেনাবিহনীর কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করে রাশিয়া। শুধু রাশিয়া নয়, আমেরিকা ডলফিন এবং সিন্ধুঘোটকদেরও বাহিনীর কাজে লাগানোর কাজ করছে।

তৎকালীন সোভিয়েত নৌসেনা এই সেভাসটোপোল বন্দরেই ডলফিনদের প্রশিক্ষণ দিত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় ডলফিনদের এই শাখা নিয়ন্ত্রণ করত ইউক্রেন। সেই সময় ক্রাইমিয়া ইউক্রেনের অধীনে ছিল।

২০১৪-তে রাশিয়া যখন ক্রাইমিয়া দখল করে, তখন থেকেই সেই ডলফিন বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেন বহু বার ডলফিন বাহিনীকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল রাশিয়াকে। কিন্তু রাশিয়া প্রতি বারই প্রত্যাখ্যান করেছে। এ বার সেই ডলফিন বাহিনীকেই ইউক্রেনের হামলা থেকে যুদ্ধজাহাজগুলিকে বাঁচাতে ব্যবহার করছে রাশিয়া।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ডলফিনবাহিনীকে ব্যবহার করেছিল। সেভসটোপোল ছিল প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখান থেকেই তাদের অভিযানে পাঠানো হত ঠান্ডা যুদ্ধের সময়।

শুধু ইউক্রেন যুদ্ধই নয়, এর আগে ২০১৮ সালে সিরিয়ার যুদ্ধের সময় টারটাস নৌঘাঁটিতে ডলফিন বাহিনীকে মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। উপগ্রহচিত্রে সেই ছবি ধরাও পড়েছিল।

ডলফিনদের প্রশিক্ষণের কাজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। হাকাই ম্যাগাজিনে দাবি করা হয়েছে, সেনা ডলফিন তৈরির জন্য ২০১২-১৯ সালের মধ্যে আমেরিকা সাড়ে ৭ কোটি ডলার খরচ করেছিল। যদিও এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী বাহিনী তৈরিতে রাশিয়া কত খরচ করেছে তার কোনও হিসেব পাওয়া যায়নি।

শিসের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে ডলফিন। শুধু তাই নয়, তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে কাজে লাগিয়ে কোনও বস্তুর দূরত্ব এবং অবস্থানকে সহজেই চিহ্নিত করতে পারে তারা। আর ডলফিনের এই গুণকে কাজে লাগিয়েই আমেরিকা এবং রাশিয়া আলাদা একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। সূত্র: আনন্দবাজার

এসি