ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দেশ থেকেই দেখুন মেঘালয়ের সৌন্দর্য (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ৪ মে ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০৪:৩১ পিএম, ৪ মে ২০২২ বুধবার

পরিচিত পর্যটন এলাকায় তো কমবেশি সবাইই ঘুরতে যান। কিন্তু যারা এসব ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত, ঘোরার জন্য নতুন কোনও জায়গা খুঁজছেন, হোক তা শহর থেকে একটু দূরে; এমন ভ্রমণ পিপাসুদের জন্যই আজকের আয়োজন। আজ জানাবো, উত্তরের জেলা জামালপুর ও শেরপুরের অবকাশ কেন্দ্রের কথা, যেখানে দিগন্ত মিশেছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে। 

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের প্রায় ৯০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে গজনী। এই অবকাশ কেন্দ্রে ঢুকতেই দেখা মিলবে হাতি, ঘোড়া, বাঘ হরিণসহ বিভিন্ন ভাস্কর্যের। 

তবে এর মূল আকর্ষণ গারো মা ভিলেজ। যেখান থেকে খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের। 

সীমান্তবর্তী ছোট পাহাড়ের পর বিশাল ধানক্ষেত, তারপরেই মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ের ছোট বড় পাহাড়ের সারি। এই গারো মা পাহাড়ে রয়েছে বেশকিছু ভাস্কর্যও, এছাড়া রয়েছে দোলনা, যেখানে দোল খেতে খেতে উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। 

এছাড়া রয়েছে কেবল কার। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝ বরাবর এঁকেবেঁকে চলা ছোট নদী। এক পাহাড় থেকে নদীর ওপর দিয়ে আরেক পাহাড়ে যেতে পারবেন কেবল কারে। এই পথে মিলবে কৃত্রিম ঝরনাও। 

গজনীতে রয়েছে ড্রাগন পাহাড়, এই পাহাড়ে যেতে হলে পেরোতে হবে নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু। সেতুর পরেই বিশাল বন, বনের মাঝেই রয়েছে বিশালাকৃতির ড্রাগনের ভাস্কর্য। 

এখানে একটি মিনি চিড়িখানারও দেখা পাবেন। যেখানে রয়েছে মেছো বাঘ, অজগর সাপ, হরিণ, হনুমান, সজারু কচ্ছপসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী। 

ঘুরতে গিয়ে কি শুধুই ঘুরবেন? তাই কি হয়! এজন্যই পুরো অবকাশ কেন্দ্রে কিছুদূর পর পর রয়েছে ছোট ছোট খাবারের দোকান এবং বসার ছাউনি। এছাড়া গারো সম্প্রদায়ের তৈরি জিনিপত্রসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রীও কিনতে পাবেন সেখানে। 

গজনীর পাট শেষ হতেই গড়িয়ে যাবে বেলা।  দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিতে পারেন জামালপুরের লাউ চাপড়া। দুটি ভিন্ন জেলা হলেও গজনী থেকে লাউ চাপড়া খুব একটা দূরে নয়। 

রাস্তার দুই ধারে মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে করতে নিমেষেই পৌঁছে যাবেন লাউ চাপড়া। ১৯৯৬ সালে গারো পাহাড়ের ২৬ একর জায়গাজুড়ে তৈরি হয়েছিল এই পিকনিক স্পট। 

 এই অবকাশ কেন্দ্রে ঢুকতেই দেখা পাবেন গারো সম্প্রদায়ের বিশাল এক ভাস্কর্যের। এর পাশ দিয়েই রয়েছে সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ১৫০ ফুট উঁচুতে উঠতে হবে। এরপর দেখা মিলবে ৬০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারের।  

এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখতে পাবেন মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ ভিউ। বিকেলের সোনা রোদে একপাশে শালবন, আর অপর পাশে ছোটবড় পাহাড়ের সারি, মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন কিছুটা সময়। 

এই অবকাশ কেন্দ্রের পাহাড়ের গায়ে গায়ে রয়েছে ছোট ছোট দোকান। বিকেলের চা নাস্তা সেরে ফেলতে পারেন সেখানেই। এরপর কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন লেকের ধারে। 

গজনী এবং লাউ চাপড়া ঘুরে দেখা যাবে একদিনেই। তাই জামালপুর কিংবা শেরপুর থেকে একটি সিএনজি অটোরিক্সা সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নেন বেশিরভাগ পর্যটক। 

এই দুটি স্পটে ঘুরতে আসা পর্যটকদের একটাই অভিযোগ,  জায়গামত নেই ডাস্টবিন। তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হয়, এতে দিন দিন অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভুমি।  

কিভাবে যাবেন? 

লাউচাপড়া পিকনিক স্পট জামালপুর জেলায় অবস্থিত হলেও ঢাকা থেকে ভ্রমণ করতে চাইলে শেরপুর জেলা হয়ে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকা থেকে ড্রীমল্যান্ড পরিবহন বা আপনার সুবিধামত বাসে  শেরপুর গিয়ে সেখান থেকে অন্য বাসে বকশীগঞ্জ চলে যান। বকশীগঞ্জ থেকে রিকশা বা ভ্যানে করে সহজে লাউচাপড়া পিকনিক স্পট যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে হলেও শেরপুর হয়ে যাওয়া ভালো। শেরপুর যেতে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া লাগবে। তবে মহাখালী থেকে দুপুর ২ টায় শেরপুর যাবার এসি বাস পাবেন, এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০ টাকা।

শেরপুর বাসস্ট্যান্ড হতে জনপ্রতি ১০ টাকা অটো রিক্সা ভাড়ায় খোয়ারপাড় শাপলা চত্বরে যেতে হবে। শাপলা চত্বরে গজনী মধুটিলা যাওয়ার অটো/সিএনজি রিজার্ভ পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য গজনী ও মধুটিলা ইকোপার্ক ঘুরে আসার অটো ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। প্রতি অটোতে ৬/৭ জন ওঠা যায়।

শেরপুর থেকে মাইক্রোবাস যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে খরচ হবে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া শেরপুর থেকে লোকাল বাসে করে ঝিনাইগাতী উপজেলায় এসে আবার সেখান থেকে বাস, সিএনজি অথবা রিক্সায় রজনী অবকাশ কেন্দ্রে সরে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে জেলা পরিষদের রেস্টহাউসে থাকতে চাইলে আপনাকে পূর্ব অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। 

ঝিনাইগাতীতে উপজেলা ডাকবাংলো এবং বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ আছে। এগুলোতে পূর্ব অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন।

এছাড়া শেরপুর জেলায় ৫০ থেকে ৫০০ টাকায় সাধারণ মানের গেষ্ট হাউজের পাশাপাশি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় হোটেল সম্পদ, কাকলী, বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, ভবানী প্লাজা নামের বেশকিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে।

শেরপুরে সড়ক ও জনপথ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎ এর পৃথক পৃথক রেষ্ট হাউজ রয়েছে। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের রেস্ট হাউসের থাকতে হলে সময় ভেদে প্রতিটি কক্ষের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হতে পারে।

এসবি/