ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মেম্বরের খপ্পরে পড়ে দু’কোটি টাকার জমি খুইয়ে সর্বশান্ত সহোদর

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ৭ মে ২০২২ শনিবার

মোংলায় বিতর্কিত এক ইউপি মেম্বরের খপ্পরে পড়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জমি খুইয়ে এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন একটি সংখ্যালঘু পরিবারের দুই ভাই। ওই জমি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর জাহাঙ্গীর মল্লিকের অপ-তৎপরতায় চৌকিদারের মোড়ের স্থানীয় নরোত্তম বিশ্বাস ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের প্রায় ছয় একর জমি ইতোমধ্যে হাতছাড়া হয়েছে। 
মেম্বর জাহাঙ্গীর দুই সহোদরের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে নিজের কব্জায় নিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার জমি বিক্রি করেন। এর মধ্যে নিজের নামেও বেশ কয়েক বিঘা জমি দলিল করে নেন মেম্বর জাহাঙ্গীর। মোংলা থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

ভুক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাস মোংলা থানায় এই অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের ওপর অস্থা না থাকায় তার দাদা দর্শন বিশ্বাস ও দাদী পদ্মবতী বিশ্বাস তাদের চার নাতি নরোত্তম বিশ্বাস, প্রেমানন্দ বিশ্বাস, গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যনন্দ বিশ্বাসকে ১৯৮২ ও ৮৮ সালে মালগাজী মৌজার চার একর ১৬ শতক করে মোট ৩২ বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে দেন। এরমধ্যে গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যনন্দ বিশ্বাস তাদের অংশের জমি বিক্রি করে দেন। বাকি দুই ভাই নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসকে তার বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস বিদেশ পাঠানোর কথা বলে কৌশলে তাদের অংশের আট একর ৩২ শতক জমির পাওয়ারনামা (আমোক্তার নামা) নেয়। কিন্তু বিদেশে না পাঠিয়ে দুই ভাইয়ের ৪৮ শতক জমি বিক্রি করে দেয় তাদের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস। 

এ খবর জানতে পেরে ২০১৫ সালে তাদের বাবাকে দেয়া জমি বিক্রির পাওয়ারনামা (আমোক্তার নামা) বাতিলে আদলতে মামলা ঠুকে দেয় ভূক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাস। এরপর আদলত বিরোধপূর্ণ ওই জমির ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা দেন।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে আরও বলা হয়, আদলতের সেই মামলা ও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় মেম্বর ধর্ষণ মামলার আসামি ও ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর মল্লিকের খপ্পরে পড়ে ছয় একর জমি বিক্রি করে নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস। বিক্রি হওয়া প্রায় দুই কোটি টাকার জমির মধ্যে বিতর্কিত মেম্বর জাহাঙ্গীর একাই কিনেছেন এক কোটি ৫৬ লাখ টাকার জমি। 

এ বিষয়ে সালিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে মিমাংসা করতে গেলে ভুক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাসকে জাহাঙ্গীর মেম্বর তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও থানায় অভিযোগ করা হয়।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, পাওয়ারনামা কোনো জমির ওপর আদলতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে কোনো ব্যক্তি সেই জমি বিক্রি করতে পারবেন না।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। জাহাঙ্গীর মেম্বরের কাছে শোনেন বলেই ফোন কেটে দেন।

তবে জাহাঙ্গীর মেম্বরের দাবি, পাওয়ারনামা নিয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাস জমি বিক্রি করছেন। আমাকে কি কারণে জড়ানো হচ্ছে জানি না।

মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এনএস//