ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

হাওর পাড়ের কৃষকের কাটা ধানে ধরেছে পচন, গজিয়েছে অঙ্কুর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ এএম, ১৯ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার

স্তূপ করে রাখা ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে

স্তূপ করে রাখা ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে

হাওর পাড়ের কৃষকদের বিপদ যেন কাটছেই না। একের পর এক বিপদের হানায় দিশেহারা তারা। পাহাড়ি ঢলের সাথে যুদ্ধ করে ধান কাটলেও তা ঘরে তোলা নিয়ে নতুন করে ঝামেলায় পড়েছেন কৃষকরা। অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কাটা ধানে ধরেছে পচন, অঙ্কুর গজিয়েছে কৃষকের মাড়াই করা ধানে।

‘অশনি’র প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষকরা তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার জন্য জমি থেকে ধান কাটেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে স্তূপ করে রাখায় অঙ্কুর গজিয়েছে সেই ধানে। এখন কৃষকরা রোদের মুখ দেখার অপেক্ষায় আছেন। রোদ উঠলে তাদের কষ্টের ফসল শুকিয়ে ঘরে তুলবেন। 

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হাওরের উঁচু জমির ফসলও ডুবে গেছে। যে সমস্ত কৃষকরা ধান কেটেছেন তা পাড়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অতিবৃষ্টির কারণে কয়েকদিন এসব ভেজা ধান স্তূপ করে রাখায় ধানে পচন ধরেছে। কাটা ধানে গজিয়েছে অঙ্কুর। 

এই মুহূর্তে কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধান। অনেকে আবার ধানের পচন ঠেকাতে বস্তা বন্দি করে পানিতে ফেলছেন ধান। এছাড়া ধান শুকানোর খলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন কেউ কেউ। 

তবে বুধবার রৌদ্রের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে। ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। যে যেখানে পারছেন শুকাচ্ছেন ধান। 

নগর গ্রামের কৃষক রন্টু চন্দ্র দাস বলেন, “জমিতে ধান পেকে যাওয়ায় বৃষ্টির মধ্যেই পাঁচদিন আগে ধান কেটে নিয়ে আসি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ধানের গোছা স্তূপ করে রাখার কারণে ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। এখন এসব ধান নিয়ে চিন্তায় আছি। ”

৫ বিঘা জমিতে এই বছর বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন উপজেলার গনিগঞ্জ গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান। জমির ধানের চালে সারা বছর পার করার আশায় গত চার মাসের বেশি সময় ধরে রাতদিন কষ্ট করেছেন তিনি। কিন্তু সে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না রোদের অভাবে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শান্তিগঞ্জে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে হাওর এলাকার ১৮ হাজার হেক্টর জমির সবগুলোই কর্তন শেষ হয়েছে। নন হাওরে ৪ হাজার হেক্টর জমির প্রায় ৯৯ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। 

টানা বৃষ্টির কারণে ধান কাটায় ব্যাঘাত ঘটছে। কিছুকিছু জায়গায় পাহাড়ি ঢলে ক্ষতি হলেও পানি কমে যাওয়ায় সে ধানও কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো হলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি যে সকল ধানে অঙ্কুর দেখা দিয়েছে তা বাড়ির উঠান, ছাদ কিংবা খোলা জায়গায় বিছিয়ে দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান বলেন, যারা ধান শুকাতে পারছেন না আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। যেখানে উঁচু জায়গা আছে যেখানে তারা যেন ধানগুলো শুকানোর ব্যবস্থা করেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। 

পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

এএইচ/