ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

একুশের গানের জন্ম গল্প

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ১৯ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:০৭ পিএম, ১৯ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার

অসম্ভব গুণী এক ব্যক্তিত্বর অনবদ্য সৃষ্টি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। এই একটি সৃষ্টির কারণে বাঙালি চাইলেও কখনো ভুলতে পারবে সেই নক্ষত্রকে। তিনি আর কেউ নন, আবদুল গফ্ফার চৌধুরী।

স্বাধীনতার পরও এ দেশের মাটি বহুবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, অনেক ইতিহাস, গল্প সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু কোনোবারই গাফফার চৌধুরীর লেখা গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি গানের  উপর কোনো আক্রমণ আসেনি। 

ভাষা আন্দোলনের সময় কিশোর ছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। সেই বয়সেই তিনি রফিক-সালাম- বরকতের রক্তের প্রতিদানের প্রয়াসে লিখে ফেলেছিলেন একটি কবিতা, সেটিই পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের অনবদ্য সুরের মূর্ছনায় হয়ে উঠেছিল একুশের গান, যা প্রেরণা যুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের; যা এখনও  প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে গেয়ে ওঠেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি। 

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সারাদেশে তখন চলছে আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে, ঢাকা শহরে সমস্ত মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) সকালবেলা এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা ভাঙার অভিযোগে গুলিবর্ষণ করে।

গুলিতে নিহত হন রফিক-সালাম-বরকত-জব্বারসহ আরো অনেকে। ঢাকা মেডিকেলের বারান্দায় রাখা হয় লাশগুলো।

এই সময় ঢাকা মেডিকেলে আহত ছাত্রদের দেখতে যান আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। মেডিকেলের আউটডোরে তিনি ভাষা সংগ্রামী রফিকের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া লাশ দেখতে পান।

লাশটি দেখে তার বারবার মনে হতে থাকে, এটা যেন তার নিজের ভাইয়েরই রক্তমাখা লাশ। তখনই দুটো লাইন তার মাথায় আসে। এরপরের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি পুরো কবিতাটি লিখে ফেলেন। 

ভাষা আন্দোলনের জন্য প্রকাশিত প্রথম লিফলেটে এটা 'একুশের গান' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৫৩ সালের মার্চে হাসান হাফিজুর রহমান 'একুশে সংকলনে' এটি প্রকাশ করেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার এই সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করেছিল।

'একুশের গান' কবিতাটির প্রথম সুরকার ছিলেন আবদুল লতিফ। তিনি তখন এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু করেছিলেন। এই গানটি গাওয়ার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে ১১ জন ছাত্রকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল সে সময়।

প্রথমে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত গানটিতে আবদুল লতিফ সুর করেন। তবে পরবর্তীতে গানটিতে সুরারোপ করেন সেই সময়ের নামকরা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। 

বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রভাত ফেরিতে প্রথম গাওয়া হয় এটি। এরপর থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই গানটি গেয়ে থাকে বাংলার মানুষ।

বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়। বর্তমানে এই গানটি হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১৫টি ভাষায় গাওয়া হয়।

এসবি/