ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

চা যেভাবে জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠে বাংলাদেশে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ২২ মে ২০২২ রবিবার

বাংলাদেশে প্রতি বছর নয় কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন হয়, যার বেশিরভাগই দেশীয় বাজারে বিক্রি হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে চায়ের চাহিদার প্রায় সবটাই নিজস্ব উৎপাদন থেকে মেটানো হচ্ছে।

চায়ের আদি বাড়ি যদিও চীনে ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের শহর বা গ্রামে এই পানীয়টি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। চীনের একটি পানীয় কিভাবে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে এরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠলো?

বাংলাদেশে চায়ের চাষাবাদ প্রথম শুরু হয় ১৮৪০ সালে। চট্টগ্রামে কুন্ডুদের বাগান নামে সেই চা বাগান অবশ্য সফলতার মুখ দেখেনি।

এরপর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিন বছর পর সেই বাগান থেকে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। পরের কয়েক বছরে হবিগঞ্জে এবং মৌলভীবাজারে আরও কয়েকটি চা বাগান তৈরি হয়।

ব্রিটিশ শাসনামলে তখন স্থানীয় বাজারে চায়ের খুব বেশি চাহিদা ছিল না। বাগানের উৎপাদিত বেশিরভাগ চা ব্রিটেনে রপ্তানি হতো। এছাড়া তখন এই অঞ্চলের থাকা ব্রিটিশ বা ইউরোপীয় লোকজন চা খেতেন, তা দেখে স্থানীয় অভিজাত গোষ্ঠীও চা খেতে শুরু করেছিলেন। তখনো বাংলাদেশের মানুষের চায়ের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়নি।

চা গবেষক ইসমাইল চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চলে প্রায় ১৮ মিলিয়ন কেজির মতো চা উৎপাদিত হতো। তার প্রায় ১৫ মিলিয়নই রপ্তানি হতো, তিন মিলিয়ন কেজির মতো এখানে খাওয়া হতো। একাত্তর সালে এসে সেই উৎপাদন এসে দাঁড়ায় ৩১ মিলিয়ন কেজিতে। সুতরাং বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে চা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ছিল, চায়ের উৎপাদনও বাড়ছিল।

চা শিল্পের ইতিহাস নিয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৮০০ শতাব্দীর প্রথমভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও আশেপাশের এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়।

১৯৩০ এর মন্দায় যখন ভারতবর্ষে উৎপাদিত চায়ের রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, তখন এগুলো দেশীয় বাজারে বিক্রির আগ্রাসী উদ্যোগ শুরু করে কোম্পানিগুলো। তারা ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে। গ্রামে, গঞ্জে, বাজারে চায়ের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।

ইতিহাসবিদ লিজ্জি কলিংহাম তার 'দ্যা টেস্ট অব এমপায়ার: হাউ ব্রিটেন'স কোয়েস্ট ফর ফুড শেপড দ্যা ওয়ার্ল্ড' বইতে লিখেছেন, সেই সময় ছোট ছোট প্যাকেটে করে বিনামূল্যে চা বিতরণ করা হতো। কীভাবে চা খাওয়া হবে সেটাও তখন শিখিয়ে দেয়া হতো। কোন কোন স্থানে চায়ের সাথে দুধ বা চিনিও বিতরণ করা হতো।

বরগুনার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম ব্রিটিশ, পাকিস্তানের আমল দেখেছেন। তিনি বলেন, আমার ছোট বেলায় দেখেছি, লোকজন বাজারে এসে তাবু গেড়ে চা তৈরি করে মানুষজনকে বিনা পয়সায় খাওয়াতো। এরপর তাদের চা তৈরি করা শিখিয়ে দিয়ে বিনা মূল্যে চায়ের প্যাকেট দিয়ে দিতো। ''

এভাবে অনেকে চা খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কয়েক বছর পর তাদের বাড়িতেও চা খাওয়ার চল শুরু হয়। তবে তখন মূলত বাড়ির মুরুব্বিরা বা মেহমান এলে চা খাওয়া হতো। এভাবেই তার চোখের সামনে আস্তে আস্তে বাড়িতে ও বাজারে চা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।

বিশেষ করে ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সাল নাগাদ ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ব্রিটিশদের যেসব জিনিস বর্জন করতে আহ্বান জানান, তার মধ্যে চা-ও ছিল। কিন্তু চায়ের কোম্পানিগুলো চা-কে ভারতীয় একটি পানীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।

স্বাধীনতার পর ভারত ও পাকিস্তানের কোম্পানিগুলো চা বিক্রির জন্য রপ্তানির পাশাপাশি দেশীয় বাজারের ওপর জোর বাড়াতে থাকে। একইভাবে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে বাংলাদেশ অঞ্চলেও।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএম/