ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ২৩ মে ২০২২ সোমবার

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মারা গেছেন ৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগে। তাকে বলা হয় ‘সর্বশেষ কার্যকর মুঘল সম্রাট’, যিনি ভারতকে ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ এই অর্ধ-শতাব্দী কাল ধরে শাসন করেছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে ভারতে সম্প্রতি বিতর্ক শুরু হয়েছে।

অন্যান্য মুঘল শাসকদের তুলনায় তার খুব একটা সুনাম ছিল না। এ জন্য তিনি ইতিহাসবিদদের কাছে কখনোই খুব একটা প্রিয় ছিলেন না। এরমধ্যে বড় কারণ তিনি তার পিতাকে বন্দী করে এবং নিজের বড় ভাইকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন।

তার প্রপিতামহ আকবরকে দেখা হয় একজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হিসেবে, তার দাদা জাহাঙ্গীর শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আগ্রহের কারণে পরিচিত ছিলেন এবং পিতা শাহজাহান ছিলেন একজন রোমান্টিক শাসক, যিনি তার স্ত্রীর নামে তাজমহল নির্মাণ করেছেন।

কিন্তু ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তাকে প্রায়শই একজন নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্য বিস্তারকারী। তিনি কঠোর শরিয়া আইন চালু করেছিলেন। হিন্দুদের জন্য ফিরিয়ে এনেছিলেন বৈষম্যমূলক জিজিয়া কর যা তাদেরকে তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রদান করতে হতো।

বলা হয়ে থাকে যে তিনি সঙ্গীতসহ অন্যান্য শিল্পকলাকে ঘৃণা করতেন এবং তিনি বেশ কয়েকটি মন্দির ধ্বংস করে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এসবই ঘটেছে কয়েকশ বছর আগে। কিন্তু সম্প্রতি তার প্রতি যে ধরনের ঘৃণা দেখা যাচ্ছে সেটা নজিরবিহীন।

হিন্দুদের পবিত্র শহর বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদকে কেন্দ্র করে বিতর্কের শুরু হয়। 

আওরঙ্গজেবের সময়কালীন বিশ্বনাথ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। তার নির্দেশে ১৬৬৯ সালে ষোড়শ শতাব্দীতে এই হিন্দু মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়।

এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আওরঙ্গজেবের জন্য মর্যাদাহানিকর হাজার হাজার রেফারেন্স, আদালতের ফাইলেও এসব পাওয়া যাচ্ছে এবং ভারতের বর্তমান হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকরাও এসব বক্তব্য তুলে ধরছেন।

ডিসেম্বর মাসে বারাণসীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আওরঙ্গজেবের নৃশংসতা এবং সন্ত্রাসের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি তরবারির সাহায্যে সভ্যতা বদলানোর চেষ্টা করেছেন। গোঁড়ামির মাধ্যমে তিনি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

গত মাসেও শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি এই মুঘল সম্রাটের নাম উল্লেখ করেছেন। ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করলে তেগ বাহাদুরের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল, বলেন মোদি।

মোদি বলেন, ‘‘যদিও আওরঙ্গজেব অনেক মস্তক বিচ্ছিন্ন করেছেন, তিনি আমাদের বিশ্বাসে নাড়া দিতে পারেন নি।’’

তার এই মন্তব্যে ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন একজন কানাডীয়-আমেরিকান সাংবাদিক যিনি টুইটারে প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘‘ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কেন ৩০০ বছর আগে মারা যাওয়া একজন মুঘল সম্রাটকে আক্রমণ করে লম্বা বক্তৃতা দিচ্ছেন?’’

বেশ কয়েকটি টুইটের মাধ্যমে ঐতিহাসিক অড্রে ট্রাশকি এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন,                 ‘‘হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করে যে, মুসলিমরা শত শত বছর ধরে হিন্দুদের পীড়িত করেছে, এবং এই কারণে আজকের দিনে অতীতের উচিত শাস্তি হিসেবে তাদেরও পীড়িত হতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান কালের মুসলিমদের ঘৃণা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা গ্রহণযোগ্য, এই ইঙ্গিত দিতেই আওরঙ্গজেবের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

টুইটারে এই আলোচনার পর আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে আরো অনেক ঘৃণা জমা হয়েছে।

আগ্রা শহরের মেয়র তাকে একজন ‘কসাই’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সব জায়গা থেকে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। 

টুইটারে মুঘল এই সম্রাটকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘‘একজন দখলদার’’ হিসেবে যিনি হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চেয়েছিলেন।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী এও বলেছেন হিন্দুদের পূজা করার জায়গায় মুঘলরা যেসব স্মৃতিস্তম্ভ এবং ভবন নির্মাণ করেছে সেগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে হবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএম/