ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পটুয়াখালীতে মুগ ডালের বাম্পার ফলন, ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ২৪ মে ২০২২ মঙ্গলবার

দেশের ৬০ ভাগ মুগডাল উৎপাদনকারী জেলা পটুয়াখালীতে চলতি বছরেও মুগ ডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্ষা আসার আগেই তাই মুগডাল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষক-কিষানীরা। ইতিমধ্যে ক্ষেতের প্রায় ৯৫ ভাগ ডাল সংগ্রহ করা হয়ে গেছে বলে দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। 

তবে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ডালের কিছু ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

এ বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৪৩১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগের আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার মোট ৮টি উপজেলায় চলতি বছরে ৮৬ হাজার ৪৩১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের মুগের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে মুগ ফসলের আবাদ হয়েছে। এছাড়া বাউফল উপজেলায় ১৬ হাজার ১৪১ হেক্টর, গলাচিপায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, কলাপাড়ায় তিন হাজার ৫৮০ হেক্টর, দশমিনায় ১২ হাজার ৪৬২ হেক্টর, মির্জাগঞ্জে চার হাজার ৯৮৫ হেক্টর, দুমকিতে তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর এবং রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে মুগ ফসলের আবাদ হয়েছে। 

সোমবার (২৩ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়. নারী-পুরুষ-শিশুরা ক্ষেত থেকে মুগ ফসল তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃষ্টির আগে দ্রুত মুগ ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ডাল নষ্ট হতে পারে এই আশংকায় বাড়ির সকল নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে ডাল তুলতে ক্ষেতে নেমেছে।

আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামের কৃষানী আলেয়া বেগম (৪২) জানান, শ্রমিক সংকট থাকার কারণে গ্রামের কৃষক পরিবারের নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে খুব ভোরে এবং বিকালে দল বেঁধে মুগ ফসল তুলতে মাঠে নামছেন।

স্থানীয় কৃষক মো. ফজলু চৌকিদার (৪৫), মো. আনোয়ার আকন(৫০)সহ একাধীক কৃষক জানান, মুগ ফসল আবাদে খরচ কম এবং ফসলের দাম পাওয়া যায় ভালো। তবে একই সময় সবার ডাল পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই ডাল তুলতে গ্রামের নারী ও শিশুদের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। যদি ডাল তোলার মেশিন থাকতো তাহলে বেশি লাভবান হওয়া যেত দাবি কৃষকদের।

জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মুগ ফসল তোলার কাজে প্রায় দুই মাস গ্রামের দরিদ্র নারীদের ব্যাপক কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই কাজে নারীরাই বেশি পারদর্শী। সাধারণত তিন বার ক্ষেত থেকে ডাল তোলা হয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় নারী শ্রমিকরা আহরিত ডালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পায়, দ্বিতীয় দফায় তিন ভাগের এক ভাগ ও শেষ দফায় দুই ভাগের এক ভাগ নিয়ে থাকেন। 

কৃষি বিভাগ থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকতেই থাকতেই ক্ষেত থেকে মুগ ফসল তুলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার আবাদকৃত মুগ ফসলের ৯৫ ভাগ তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, জেলায় মুডগালের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বল্প পরিশ্রম ও ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষকরা মুগ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মুগ ফসল আবাদে কৃষক সবদিক থেকে লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে মুগ গাছের শিকরে রাইজরিয়াম নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে ক্ষেতের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এতে করে পরবর্তী আবাদে কৃষকের রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কম লাগবে বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী অঞ্চলে বারি-৩ ও বারি-৬ জাতের মুগের আবাদ বেশি হচ্ছে। এ জাত দুটোতে ফসল তিনবার তুলতে হয়। সারিবদ্ধভাবে মুগ চাষে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এতে ১৫ ভাগ বেশি ফসল পাওয়া যাবে। 

কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শের কারণে এবছর মুগ ফসলের উৎপাদন দেড় লাখ টন ছাড়াবে। বর্তমান পাইকারী বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি করলে প্রায় হাজার কোটি টাকার মুগ ডাল এ জেলার কৃষকরা বিক্রি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।

এএইচ/