মৃত সন্তানের প্রতি মা হাতির মমতা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩৮ পিএম, ২৮ মে ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৩:৪৮ পিএম, ২৮ মে ২০২২ শনিবার
মায়ের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। সে মানুষ হোক আর প্রাণী। আবারও তার প্রমাণ মিললো। সম্প্রতি একটি মা হাতি তার মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে পারি দিয়েছে মাইলের বেশি পথ।
এই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স। সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা যে শুধু মানুষেরই নয়, তা প্রমাণ করেছে এই প্রাণী। এই দৃশ্য দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারলেন না প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা যায়, দু’দিন আগে একদল হাতি ঢুকে পড়েছিল বানারহাটের চুনাভাটি চা বাগানে। শুক্রবার সকালে হাতির দলটি চলে আসে আমবাড়ি চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রেড ব্যাংক চা বাগানের দিকে রওনা দেয় হাতিগুলো।
সেখানকার বনদপ্তর জানিয়েছে, দলটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি হাতি ছিল। চুনাভাটি চা বাগান থেকে কিছুটা দূরে একদিকে ডায়না আর একদিকে রেতির জঙ্গল। বনকর্মীদের অনুমান, এই দুই জঙ্গলের কোনও একটি থেকে হাতির দলটি লোকালয়ে চলে আসে।
আমবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দারা লক্ষ্য করেন, দলের সব হাতি রেড ব্যাংক চা বাগানের দিকে রওনা দেয়। তবে একটি হাতি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। দু’পাশে চা গাছ থাকায় হাতিটির গতিবিধি বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাসিন্দারা। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারেন হাতিটির সঙ্গে একটি সদ্যোজাত বাচ্চাও রয়েছে। তবে সেটি জীবিত নয়, মৃত। যাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল মা হাতি। বারবার বাচ্চাটিকে আদর করছে সে। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পান মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে রেড ব্যাংক চা বাগানের পথ ধরে চলে যায় মা হাতিটি।
প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ যেতে যেতে বাচ্চাকে কখনও মাটিতে রাখছে আবার কখনও আদর করছে। এভাবেই রেড ব্যাংক চা বাগানে গিয়ে দাঁড়ায় মা হাতিটি। সেখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপেক্ষায় ছিল দলের বাকি সদস্যরা।
বাচ্চা-সহ মা হাতিটিকে ঘিরে দাঁড়ায় তারা। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের বনকর্মীরা। সকাল গড়িয়ে দুপুর, বিকেলে মৃত সন্তানকে আগলে দাঁড়িয়ে থাকে মা হাতি। যা দেখে চোখের পানি সামলে রাখতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শী এবং বনকর্মীরা।
এই বিষয়ে বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার শুভাশিস রায় জানান, যতক্ষণ না মা তার মৃত সন্তানকে রেখে চলে যায় ততক্ষণ অপেক্ষা করাই নিয়ম। তারপরই হস্তিশাবকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। রিপোর্ট হাতে আসার পর সদ্যোজাত হস্তিশাবকের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।
গত বছরও এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন বৈকন্ঠপুর বন বিভাগের কর্মীরা। গৌরিকোন এলাকায় মৃত শাবককে ঘিরে তিনদিন দাঁড়িয়ে ছিল দশটি হাতির একটি দল। তিনদিন পর হাতির দলটিকে সরিয়ে শাবকের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন বনকর্মীরা।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
আরএমএ/ এসএ/