ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

কফিনে শুয়ে কলকাতা ছাড়লেন কেকে, মুম্বাইয়ে শেষকৃত্য

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ১০:৩৫ এএম, ২ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

কলকাতাকে আলবিদা জানিয়ে চিরবিদায় নিলেন ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী  কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে।

বুধবার দুপুরে কলকাতার মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার দেহ নিয়ে আসা হয় কলকাতার রবীন্দ্রসদনে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গান সেলুট দেওয়া হয়। 

এক ঘন্টার মতো সেখানে তার দেহ রাখার পর মরদেহ নিয় যাওয়া হয় কলকাতা বিমানবন্দরে। নিথর দেহে কলকাতা থেকে মুম্বাইগামী বিমানে কলকাতাকে চিরদিনের মতো আলবিদা জানান শিল্পী।

কেকে-র পরিবার সূত্রে জানানো হয়়েছে বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের ভারশোভায় তার শেষকৃত্য হবে। পরিবার ,পরিচিত ,বন্ধু ও সহকর্মীদের উপস্থিতিতে বেলা ১১ টার সময় সম্পন্ন হবে শেষকৃত্য।

এর আগে বুধবার কেকের মৃত্যুতে তার সহযোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে নিউমার্কেট থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সিএমআরআই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল কেকে র মুখে, মাথায় মিলেছে আঘাতের চিহ্ন। তবে শেষ পাওয়া খবরে অনুযায়ী ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মেলেনি তেমন অস্বাভাবিক কোনো তথ্য। 

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে যে, হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা ছিল কেকের। তবে রাসায়নিক বিশ্লেষণের পর পাওয়া যাবে চূড়ান্ত রিপোর্ট। এখনও পর্যন্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্টেই আসল কারণ জানা যাবে কেকের প্রয়াণের কারণ। 

তবে গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ । মধ্য কলকাতার যে পাঁচতারা হোটেলে তিনি ছিলেন রাতেই সেখানে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশ হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেখানকার স্টাফ এবং ম্যানেজার কে। বুধবার দুপুরে হোটেলে পৌঁছায় ফরেনসিক টিম, সংগ্রহ করে নমুনা।

পাঁচতারা হোটেলে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করতে আসেন জয়েন্ট সিপি ক্রাইম মুরলী ধর শর্মা ও ডিসি সেন্ট্রাল রূপেশ কুমার। সহযোগীরা বলছে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় থেকেই অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে।

গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ২২০০ ধারণক্ষমতার ইনডোর হলটিতে গতকাল জমায়েত হয়েছিল প্রায় ৭ হাজার অনুরাগী। তাদের আটকাতে যেমন ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্র ইউনিয়ন। পাশাপাশি ভিড়ে ঠাসা ইনডোরে ছিলো না এসির ব্যবস্থা। ভিড় নিয়ন্ত্রণে একসময় ফায়ার এক্সটেংগুইশার স্প্রে শুরু করেন আয়োজকরা। 

নজরুল মঞ্চে প্রবেশের সময় শিল্পী কেকে কে ঘিরে থাকা অনুরাগীদের ছত্রভঙ্গ করতেও স্প্রে করা হয় ফায়ার এক্সটেংগুইশার। যা মুখে চলে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন কেকে। শেষ পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায় গরমে কাহিল হয়ে অনুষ্ঠানের মাঝেই বারবার মুখ মুছছিলেন শিল্পী। মঞ্চে থাকাকালীন স্পটলাইটও বন্ধ করতে বলেন তিনি। সহযোগীরা জানান হোটেলে ফিরে বমিও করেন তিনি।  

ম্যানেজার হিতেশ ভাট জানান অনুষ্ঠান শেষে ফিরে যাওয়ার সময় গাড়িতে শীত করছিল কেকে-র। তার জন্য গাড়ির এসি বন্ধ করে দিতে হয়। হাতে-পায়ে ক্র্যাম্প ধরতে শুরু করে।

তবুও হোটেলে ফিরে অনুরাগীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছবিও তোলেন কেকে। হোটেলের ঘরে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান। তবে একার পক্ষে কেকেকে তোলা সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। হোটেল কর্মচারীদের ডেকে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কেকেকে। বিগত ১৫ দিন ধরে দেশের একের পর এক শহরে শো করে বেরিয়েছেন তিনি। ফলে বেশ ক্লান্ত ছিলেন তিনি।  

এদিন সকাল ন'টায় নির্ধারিত সময়ে কলকাতায় এসে পৌঁছন প্রয়াত সংগীতশিল্পীর পরিবারের সদস্যরা। সকাল ৭টা নাগাদ মুম্বাই থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা। এরপর দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন কেকের স্ত্রী ও পুত্র। বিমানবন্দর থেকে তারা পৌঁছান সিএমআরআই হাসপাতালে। পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে তাদের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের জন্য  হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শিল্পীর মরদেহ।

এবিষয়ে চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাধারণত হার্টের রোগের ক্ষেত্রেই এরকম ঘাম হচ্ছে দেখা যায়। কখনও ব্যথা হয়। আবার কখনও হয় না। হার্টের গতিবেগ বাড়তে পারে। ফলে মৃত্যু হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের আশঙ্কাও থাকে।

এসবি/