বাগেরহাটে জমি দখল করে মৎস্য ঘের বন্ধে মানববন্ধন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৫৪ পিএম, ২ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে হতদরিদ্রদের জমি দখল করে জোরপূর্বক মৎস্য ঘের করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। মাছ চাষের সুবিধার্থে ঘেরে লবণ পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে ধানি জমিতে। ফলে ধান চাষও করতে পারছেন না কৃষকরা। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে জমির মালিক ও স্থানীয় কৃষকরা।
এর বিরুদ্ধে বুধবার বিকালে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধনে জমি দখল মুক্ত করাসহ ভূমিদস্যুদের বিচার দাবি করেন তারা।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয় কুমার মণ্ডল বলেন, “ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দুইশ’ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করছেন পার্শ্ববর্তী পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ্জাক মজুমদারের ভাইয়ের ছেলে, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার এবং তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার।। যদিও এই জমির মধ্যে তাদের কোন জমি নেই। স্থানীয় অর্ধশত মানুষের ৮০ থেকে ১০০ বিঘা এবং অন্য এলাকার কয়েকজনের একশ’ বিঘা জমি রয়েছে।”
তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জালাল আহমেদ লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি এলাকার নিরহ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে কৃষকরা ধানও ফলাতে পারেন না। বিভিন্ন দপ্তরে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোন ফল হয়নি। স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নেতা।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার বলেন, “অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে গায়ের জোরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষের জমি দখল করে খাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এরা এত বেপরোয়া যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরিবাঁধের নিচে পাইপ দিলে মাঠে লবণ পানি ঢোকায়। ফলে আশপাশের জমিতে কৃষকরা ধান করতে পারছেন না।”
এদিকে পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার বলেন, “কৃষক ও স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছে তার কোন ভিত্তি নেই। ওই ঘেরে আমার বাবা-চাচাদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা কারও জমি জোরপূর্বক দখল করিনি। একটি প্রভাবশালী মহল এই ঘের দখলের জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার বলেন, এই ঘেরে প্রায় ৬০ জন লোকের জমি রয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ লোক আমাদের সাথে রয়েছে। আমরা কারও সাথে জোর জবরদস্তি করিনি। সবাই স্ব-ইচ্ছায় আমাদের কাছে জমি লিজ দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাজ্জাক মজুমদার বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ওখানে আমাদের নিজেদের জমি রয়েছে। আমার ভাগ্নে ওই জমি দেখভাল করছে। এছাড়া অন্য মালিকদের জমির জন্য হাড়ির টাকা দেওয়া হয়।”
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘের সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএইচ