ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বাংলাদেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় বছরে ৬৫ কেজি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ৭ জুন ২০২২ মঙ্গলবার

সারা দুনিয়াতে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয় তার একটি বড় অংশ মাঠ থেকে আর খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায় না। সেটি অপচয় হয়ে যায়। আর খাদ্য অপচয়ের ক্ষেত্রে উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত কেউই বাদ যায় না।

বাংলাদেশে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয়, তারও একটি বড় অংশ ভাগাড়ে যায়, মানে নষ্ট হয়।

জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে বেশ বেশি।

ইউনেপের ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দেশে খাবারের এত অপচয় কেন হয়? কিভাবেই বা সেটি ঠেকানো যাবে?

২০২১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও বাংলাদেশে একটি গবেষণা চালায় যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে উচ্চ আয়ের পরিবারে বেশি খাদ্য অপচয় হয়।

ওই গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান।

তিনি জানান, তাদের গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন উচ্চ আয়ের পরিবারে এক মাসে মাথাপিছু ২৬ কেজি খাদ্য অপচয় হয়। তুলনায় মধ্য এবং নিম্ন আয়ের পরিবারে অপচয় কম হয়।

অধ্যাপক কামরুল হাসান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কয়েকটি ধাপে খাদ্য অপচয় হয়। তবে ফসলের ক্ষেত থেকে খাদ্যসামগ্রী বাজারে এসে পৌঁছানোর মধ্যবর্তী পর্যায়ে সবচেয়ে বড় অপচয়টি হয় বলে তিনি বলছেন।

এর মধ্যে ফসল তোলার পর্যায়ে এক ধরণের অপচয় হয়, এরপর মজুদ বা সংরক্ষণ করা এবং ব্যাপারীর মাধ্যমে সেটি বাজারজাত করার সময় আরেকবার অপচয় হয়।

এরপর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যখন বড় শহরে ফসল, সবজি ও ফল, মাংস, ডিম, বা দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আসে তখন আরেক দফায় অপচয় হয়।

কারণ হিসেবে অধ্যাপক হাসান বলেছেন, দেশে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম, ফলে মাঠ থেকে ফসল তোলা, প্রক্রিয়াকরণ এবং মজুদ, তারপর সেগুলো বাজারে পরিবহন-এর প্রতিটি পর্যায়েই অপচয় হয়।

এফএও'র গবেষণায় দেখা গেছে, শস্যদানা মানে চাল, গম ও ডাল এসব উৎপাদন থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই প্রায় ১৮ শতাংশ অপচয় হয়। ফল আর সবজির ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।

কীভাবে ঠেকানো যাবে?

খাদ্যের অপচয়ের সঙ্গে আরো অনেক অপচয় এবং ক্ষতি হয়। এর মানে হচ্ছে উৎপাদনের পেছনে যে অর্থ লগ্নি করা হয়, যে পরিমাণ পানি ও জ্বালানি বিনিয়োগ করা হয়েছে, ফসল তোলা এবং পরিবহণ ও বাজারজাতকরণ এই প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রম ও অর্থ এবং প্রাকৃতিক শক্তির অপচয় হওয়া।

আর নষ্ট হওয়া খাবার জলবায়ু পরিবর্তনেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এর মানে হচ্ছে চাহিদা পূরণে বেশি বেশি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে যা জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়।

আবার ভাগাড়ে ঠাঁই হওয়া ফেলে দেয়া খাবার পচে মিথেন গ্যাস তৈরি করে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য ভবিষ্যতে আরও খাদ্যের দরকার হবে। শুধুমাত্র অপচয় বন্ধ করেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা।

অধ্যাপক হাসান বলেন, 'ফুড লস' ঠেকাতে কৃষি কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো, সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা, বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে পুরো চক্রটির কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।

তবে 'ফুড ওয়েস্ট' ঠেকাতে হলে বিশেষজ্ঞরা নানা রকম পরামর্শ দেন যাতে করে বাজার থেকে খাবার মানুষের পেটে যেতে পারে, ভাগাড়ে নয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএম/