ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

স্বেচ্ছা রক্তদাতারাই নিরাপদ ও বিশুদ্ধ রক্তের উৎস

প্রফেসর ডা. মো. আবুল হোসেন

প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ৮ জুন ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০৮:১৬ পিএম, ৮ জুন ২০২২ বুধবার

একজন মানুষের সামান্য রক্তে প্রাণে বেঁচে যায় অন্য একজন মানুষ। অনেকে এই সামান্য সাহায্যেতেই নতুনভাবে বাঁচার রসদ পান। তাই রক্তদান যে কোনও মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। কাউকে রক্ত দেওয়ার অর্থ হল, তাকে নতুন জীবন দান করা। কিন্তু এর পাশাপাশি রক্ত দিলে নিজের শরীরেও অনেক উপকার হয়। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) হলো বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। উন্নত দেশে বেশিরভাগ রক্তদাতাই হলেন স্বেচ্ছা রক্তদাতা, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্তদান করেন। এভাবে যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার এবং সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। 

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আরো কিছু উদ্দেশ্য হলো- জনগণকে রক্তদানের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা, উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের মাঝে সংহতি এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে রক্তদানের গুরুত্ব প্রচার, রক্তদানের ক্ষেত্রে অমূলক ভয় দূর করা, নতুন রক্তদাতা তৈরি করা এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা। সেই সাথে দেশের জনগনকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি, এইডস, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে স্বেচ্ছা রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। 

প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করে। ২০২২ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, Donating blood is an act of solidarity. Join the effort and save lives. ২০২২ সালে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ মেক্সিকো। এ দিবসকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে মেক্সিকো সিটিতে।

বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের ইতিহাস
২০০৫ সালে ৫৮ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) এ দিবস পালনের জন্যে তাগিদ দিয়ে আসছে। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রাখছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। 

১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। 

স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা মানুষের জন্যে উৎসর্গীকৃত ১৪ জুনের বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ১৪ জুন দিবসটি পালনের আরো একটি তাৎপর্য হচ্ছে, এদিন অস্ট্রিয়ান বায়োলজিস্ট ও ফিজিশিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মদিন। এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ এ, বি, ও, এবি। ব্লাড ট্রান্সফিউশিন পন্থার এই জনকের জন্মদিনকে সম্মান জানাতেই দিনটিকে বেছে নেয়া। 

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশন (এফআইওডিএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএসবিটি)-এর সহযোগিতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপনের দায়িত্ব পালন করে।

রক্তের চাহিদা 
জীবনের জন্যে প্রয়োজন রক্ত। আর রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন। একসময় (২০০১ সালের জরিপ অনুযায়ী) প্রয়োজনীয় এ রক্তের একটা বড় অংশই (৪৭%) আসত পেশাদার রক্তবিক্রেতাদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন এ হার নেমে এসেছে মাত্র ১২ শতাংশে। কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমসহ অপরাপর রক্ত কার্যক্রমগুলোর এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। আমাদের দেশে একক রক্তদাতার সংখ্যা বেশি থাকলেও বহুবার রক্ত দিয়েছেন এমন দাতার সংখ্যা অনেক কম।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বেচ্ছা রক্তদানের হারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে, এমনকি ভুটানের চেয়েও! তবে আশার কথা হলো, আমাদের ১৮-৬০ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ শতাংশ যদি শুধু তাদের জন্মদিনে রক্ত দেন, তাহলেই আমরা আমাদের প্রয়োজনের পুরোটাই মেটাতে পারি স্বেচ্ছা রক্ত দিয়ে। পেশাদার রক্তবিক্রেতাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ না করে রক্তের চাহিদা পূরণের জন্যে প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা।

রক্তদান কতটা নিরাপদ
রক্তদান কতটা নিরাপদ এটা নিয়ে কারো কারো মধ্যে সংশয় আছে। আসলে দৈহিকভাবে রক্তদানের কোনো ঝুঁকি নেই। একজন পুরুষের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৭৬ মিলিলিটার এবং নারীদের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৬৬ মিলিলিটার রক্ত থাকে। সবারই কেজিপ্রতি ৫০ মিলিলিটার রক্ত সংবহনের কাজে লাগে, বাকিটা উদ্বৃত্ত। অর্থাৎ পুরুষের ওজনের কেজিপ্রতি ২৬ মিলিলিটার ও নারীদের ওজনের কেজিপ্রতি ১৬ মিলিলিটার রক্ত উদ্বৃত্ত। ফলে ৫০ কেজি ওজনের একজন পুরুষের উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ১৩০০ মিলি এবং একই ওজনের একজন নারীর শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ৮০০ মিলি। স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করা হয়, যা তার শরীরের উদ্বৃত্ত রক্তের অর্ধেকেরও কম। ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।

রক্ত মূলত দুটো উপাদানে বিভক্ত, রক্তকণা বা কোষীয় অংশ এবং রক্তরস বা জলীয় অংশ। তিন ধরনের রক্তকণিকা রয়েছে- লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা এবং অনুচক্রিকা। রক্তের শতকরা ৪৫ ভাগই রক্তকণিকা। বাকি ৫৫ ভাগ রক্তরস বা প্লাজমা, যার শতকরা ৯২ ভাগই জল।

রক্তকণার মধ্যে লোহিতকণা কোষে অক্সিজেন নিয়ে যায় আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফিরিয়ে তা নিয়ে আসে হৃৎপিণ্ডে। শ্বেতকণা বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকা রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। প্লাজমা মূলত কণাগুলোকে বহন করে আর খাদ্য ও বাহ্য পদার্থ (ভিটামিন, হরমোন ইত্যাদি) পরিবহন করে। রক্তকণাগুলোর প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট আয়ু আছে। সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে লোহিত কণা, আয়ু ১২০ দিন মাত্র। বিভিন্ন ধরনের শ্বেতকণার আয়ু ভিন্ন ভিন্ন, দুই থেকে ১০ দিন। অনুচক্রিকা দুই দিন পর্যন্ত বাঁচে।

এজন্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিয়মিত তিন থেকে চার মাস অন্তর রক্তদান করতে পারে। এতে শারীরিক ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই; বরং তা রক্তদাতার শারীরিক সুস্থতাকেই বাড়িয়ে দেয়।

কোয়ান্টাম ল্যাবের রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য : 
কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। তখন শুধু ভ্রাম্যমান রক্তদাতাদের সমন্বয়ের কাজটিই কোয়ান্টাম করত। এরপর থেকেই এ কার্যক্রমটিতে গতির সঞ্চার হতে শুরু করে। ২০০০ সালে কাকরাইলে প্রতিষ্ঠিত হয় নিজস্ব ল্যাব। ২০০০ সালে শুরু করে দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় কোয়ান্টাম ল্যাব গড়ে তুলেছে চার লক্ষাধিক রক্তদাতার একটি ডোনার পুল। (২০০০ থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত) মোট রক্তদাতার সংখ্যা ৪,৪৩,২৫৮ জন। 

২২ বছরের পথ পরিক্রমায় (২০০০ থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত) ১৩,৯৮,৭৪৩ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পেরেছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম। রক্ত সংগ্রহ করেছে (২০০০ থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত) মোট ৮,৭৭,৭৯৬ ইউনিট। ৮,৮১,৭০৪ ইউনিট রক্ত ডোনাররা সরাসরি ল্যাবে ও ক্যাম্পে এসে দিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ক্যাম্প থেকে সংগৃহীত হয়েছে মোট ২,৫৪,৪৭৬ ইউনিট এবং ল্যাবে সংগৃহীত হয়েছে ৬,২৭,২২৮ ইউনিট। ১৭,১৭৩ ইউনিট রক্ত ডিসকার্ড বা বাতিল করতে হয়েছে।

কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে (২০০০ থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত) ডোনারদের নিজ দেহের জন্যে সম্পূর্ণ ফ্রি প্রদান করা হয় ২০২৭ ইউনিট রক্ত, ডোনারদের নিকটাত্মীয়দের জন্যে (মা, বাবা, সন্তান, স্বামী-স্ত্রী) ২০% খরচে প্রদান করা হয় ৩৫,২৬০ ইউনিট রক্ত, সামর্থ্যহীন রোগীদের জন্যে ন্যূনতম প্রসেসিং খরচে প্রদান করা হয় ৯৪,৪৩৩ ইউনিট রক্ত, সামর্থ্যহীন রোগীদের জন্যে বিনা মূল্যে (কোনোরকম প্রসেসিং খরচ ছাড়াই) প্রদান করা হয় ৪৭,৭৭৫ ইউনিট রক্ত। 

প্রতি মাসে কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে ৬৫৭ জন আইডি কার্ডধারী সামর্থ্যহীন রোগী সেবা দিয়ে আসছে, যারা থ্যালাসেমিয়া, ডায়ালাইসিস, হিমোফেলিয়া অ্যানিমিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে একাধিকবার এসকল রোগীদেরকে ৫০ শতাংশ আবার কোনো কোনো রোগীদের ৭৫ শতাংশ, এমনকি কাউকে বিনা মূল্যে রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে যাচ্ছে কোয়ান্টাম। আর (২০০০ থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত) হোল ব্লাড : ৫,২২,৩৬০ ইউনিট, রেডসেল কনসেনট্রেট : ৩,৪০,৮৬৮ ইউনিট, প্লাটিলেট কনসেনট্রেট : ২,১০,১৫৪ ইউনিট, ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা : ৩,০৩,৩৯২ ইউনিট, ফ্রেশ প্লাজমা : ৭,৮৮৭ ইউনিট, প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা : ১২,৩৯৬ ইউনিট, প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা : ৫ ইউনিট, প্রোটিন সলিউশন : ১৩ ইউনিট, ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট : ১,৬৬৯ ইউনিট।

নিরাপদ রক্তের জন্যে
কোয়ান্টাম ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত পাঁচটি মৌলিক স্ক্রিনিং সম্পন্ন করে রক্ত প্রদানের ব্যাপারে আপসহীন মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম। রক্তে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস, এইডস বা ম্যালেরিয়া ইত্যাদি যে-কোনো একটি জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে কোনো রকম সংশয় বা প্রশ্ন দেখা দিলে সে রক্তের ব্যাগ সাথে সাথে বাতিল ও ধ্বংস করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)  নির্ধারিত মৌলিক ৫টি স্ক্রিনিং (হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইডস এবং ম্যালেরিয়া) বাধ্যতামূলকভাবে সম্পন্ন করা হয়। ফলে ল্যাব থেকে সরবরাহকৃত রক্তের ব্যাপারে সারা দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন পুরোপুরি আস্থাশীল। আন্তরিক সেবা, আধুনিক প্রযুক্তি ও আপসহীন মান নিয়ন্ত্রণের ফলে মানুষ নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনে প্রথমেই ছুটে আসেন কোয়ান্টাম ল্যাবে। দেশে মোট রক্তচাহিদার ১৬% ই এখন মেটাচ্ছে কোয়ান্টাম।

একব্যাগ রক্ত একসাথে কয়েকজনের প্রয়োজন মেটাতে পারে....
একব্যাগ রক্ত দিয়ে শুধু একটি নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে তিনটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কারণ এক ব্যাগ রক্তকে এর উপাদান হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করে তিন জনের দেহে সঞ্চালন করা সম্ভব। রোগভেদে একেক রোগীর জন্যে রক্তের একেক উপাদান লাগে। যেমন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে শুধু রক্তরস (প্লাজমা) দিলে চলে। আবার রক্তস্বল্পতার রোগীকে দিতে হয় রক্তকণা বা প্যাকড্ সেল। হিমোফিলিয়া রোগীদের ফ্যাক্টর ৮ ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিতে হয় লোহিত রক্তকণা। 

কোয়ান্টাম ল্যাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আপনার দেয়া এক ব্যাগ রক্তকে এমনি ৮টি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
 
১. প্লাটিলেট কনসেনট্রেট ২. ফ্রেশ প্লাজমা ৩. ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ৪. প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ৫. প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা ৬. প্রোটিন সলিউশন ৭. রেডসেল কনসেনট্রেট ৮. ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট
অর্থাৎ রক্তদাতার দেয়া একব্যাগ রক্ত একইসাথে কাজে লাগে অনেকজনের প্রয়োজনে।

কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের প্রাণ হলেন সম্মানিত রক্তদাতারা। তাদের স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আরো অনেক থ্যালাসেমিয়া রোগী, সন্তানসম্ভবা নারী কিংবা অপারেশনের রোগীসহ মুমূর্ষু রোগীকে প্রয়োজনের মুহূর্তে রক্ত সরবরাহ করা সম্ভব। ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে-কোনো সুস্থ ব্যক্তি যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির ওপর, তারা প্রতি চার মাস অন্তর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ্ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের একভাগ। রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা নতুন কণিকা  তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা বদলায়। তাই নিয়মিত রক্ত দিলে শরীরের লোহিত 

কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বরং আরো বেড়ে যায়। সকল সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক সচেতন নাগরিকদের প্রতি বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে আহ্বান- স্বেচ্ছায় রক্তদান করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। ১৯ তম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখুন প্রথম রক্তদানের মাধ্যমে। আর রক্ত দিন প্রতি জন্মদিনেই। সেবার আনন্দে আর তৃপ্তিতে আপনার মন ভরে উঠবে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

এসি