নানা আয়োজনে ৫ম আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস পালিত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ৯ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার
নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে আজ দেশে ৫ম আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস ২০২২ উদযাপিত হয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে ১৫০ জন লিভার বিশেষজ্ঞ স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতি প্রচারের মাধ্যমে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মত এই দিবসটি পালিত হয়। সে বছরের ৫ জুন ওয়াশিংটন, প্যারিস ও লন্ডন থেকে একসঙ্গে প্রচারিত হয়েছিল এই প্রেস রিলিজটি। এতে বাংলাদেশ থেকে স্বাক্ষর দান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের বর্তমান প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। প্রেস রিলিজটিতে স্বাক্ষরদানকারী অপর বাংলাদেশি হলেন জাপান প্রবাসী লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। প্রথম বছর আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস পালিত হয়েছিল বিশ্বের ২৫টি দেশে। আর ৫ বছরের মাথায় এ বছর এটি উদযাপিত হচ্ছে গোটা বিশ্বব্যপি।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের উদ্যোগে একটি বর্নাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, প্রক্টর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নজরুল , ডাইরেক্টর, অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আল মামুন, চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ও রেসিডেন্টবৃন্দ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগে ফ্যাটি লিভারের জেনেটিক স্টাডি সংক্রান্ত যৌথ গবেষণার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজির মধ্যে একাধিক সমঝোতার সম্মতিপত্র বিনিময় হয়। অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান স্ব-স্ব বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন। বিএসএমএমইউ ছাড়াও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের হেপাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষ্যে একটি র্যালি বের করা হয় ও সাইন্টেফিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সকালে ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে একটি সচেতনতামুলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন পল্লী বাউল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরা। পাশাপাশি পথ নাটক সংগঠন ইউনিভার্সেল থিয়েটারের শিল্পীরা একটি পথ নাটকও মঞ্চায়ন করেন। অনুস্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আহমেদ গিয়াস, সাধারন সম্পাদক, পথ নাটক পরিষদ, জনাব সাইফ উদ্দিন আহমেদ, সাধারন সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য স্নাতক মন্চ ও বেগম নাজমা ফেরদৌসী, সভাপতি, বাংলাদেশ পল্লী বাউল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। অতিথিরা ফ্যাটি লিভারের মত একটি মারাত্মক রোগ সম্বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এ ধরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করায় ফোরামের প্রশংসা করেন। ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভবিষ্যতে বৃহত্তর পরিসরে এ ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে দুপুরে এসোসিয়েশন ফর দ্যা লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. মোঃ নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, ডীন, মেডিসিন ফ্যাকাল্টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়, অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, ডীন, ফার্মাসী ফ্যাকাল্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সাধারণ সম্পাদক, ডা. ফারুক আহমেদ, সহ-সভাপতি, ডা. ফজল করিম, কোষাধ্যক্ষ এবং ডা. শেখ মোহাম্মদ নুর ই আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক, এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজেজেজ বাংলাদেশ, ডা. নুরুল ইসলাম হাসিব, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, এবং শ্রী দেবাশীষ সাহা, ডিএসএম, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
আলোচকদের বক্তব্যে ফ্যাটি লিভারের নানাদিক, এর ভয়াবহতা, প্রতিকারের উপায় আর প্রতিকারের জন্য মিডিয়ার ভূমিকাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে মেদ-ভুড়ি, ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, হাইপারটেনশন বা অতিরিক্ত রক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজম আর মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারি ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমেরিকায় ৩৩ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অন্যদিকে আমাদের উপমহাদেশে ৪৯ শতাংশ মানুষ, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত। হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস অনেক সময়ই ফ্যাটি লিভার তৈরি করে থাকে। তবে ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল। সিডেন্টারি বা আয়েশি জীবনযাপন আর অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে লিভারে চর্বি জমতে পারে। আমাদের দেশেইদানীংকালের ‘ফাস্ট ফুড’ কালচার আর আমাদের ভাত নির্ভরতা এ দেশে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাবের বড় কারণ।
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত অনেকেরই লিভারে ক্রনিক হেপাটাইটিস বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ননএলকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস বা সংক্ষেপে ‘ন্যাশ’। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। ভারতীয় উপমহাদেশে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের ১৬ শতাংশের ফ্যাটি লিভার রয়েছে। যেসব রোগীর স্টিয়াটো হেপাটাইটিস আছে, তাদের প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন। আর তাদের কারও কারও এমনকি লিভার ক্যান।
কেআই//