জাবির নতুন ৬টি হলের নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে অক্টোবরে
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:৫০ এএম, ১৪ জুন ২০২২ মঙ্গলবার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দশতলা বিশিষ্ট নতুন ৬টি হলের নির্মাণ কাজ এই বছরের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন। তবে নির্মিত হলগুলোতে একটি খাট ছাড়া অন্যকোন আসবাবপত্র পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তীব্র আসন সংকট। সমস্যা নিরসনেই তৈরি হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ছয়টি হল। নতুন হলগুলোতে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটি হলে রাখা হয়েছে ছয়টি লিফট। প্রতিবারে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী লিফটে চলাচল করতে পারবেন।
প্রতিটি রুমের সঙ্গে থাকবে বারান্দা ও করিডোর। হলের মধ্যে বিনোদনের জন্য থাকবে তিনটি কমন রুম, পড়াশুনার জন্য উন্নত লাইব্রেরি, হল ছাত্র সংসদ ও একটি ক্যান্টিন। ডাইনিংয়ে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী একত্রে খাবার খেতে পারবেন।
শিক্ষার্থীরা চাইলে নিজেরা রান্নাও করতে পারবেন। সেজন্য প্রতি তলায় রাখা হয়েছে গ্যাসের চুলা। শিক্ষার্থীদের ব্যায়ামের জন্য হলের মধ্যেই জিমনেশিয়ামের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সংযোগের সুবিধা থাকবে।
নির্মিতব্য হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা করে এবং আসবাবপত্র কিনতে যে ১২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে তা দিয়ে সবগুলো হলে শিক্ষার্থীদের ভালমানের আসবাবপত্র দেয়া সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আপাতত কেবলমাত্র একটি খাট দিয়েই নতুন হলে শিক্ষার্থীদের তোলা হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসন হয়।
জানা যায় ২০১৫ সালে প্রণয়নকৃত ডিপিপি (ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্ট প্রোপোজাল) অনুযায়ী হল প্রতি ২ কোটি করে ৬টি হলে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালে পুনরায় হিসেব করে দেখা গেছে যে একটি হলে উন্নত মানের পরিপূর্ণ আসবাবপত্র দিতেই খরচ হবে ৬ কোটি টাকার মত। ফলশ্রুতিতে সিট সংকট নিরসনের জন্য উক্ত ১২ কোটি টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একটি খাট দিয়েই হলে উঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালে প্রণীত ডিপিপিতে একটি চেয়ারের দাম ১৯০৮ টাকা, একটি খাটের দাম ৫৯৬৪ টাকা টাকা ধরা হলেও পড়ার টেবিলের দাম ধরা হয়েছে মাত্র ৫৯৪ টাকা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো: নাসির উদ্দিন বলেন, ‘৫০০ টাকা যেটা আমরা দিয়েছি ওটা ভুল ছিল।’
পূর্ববর্তী ডিপিপি বাদ দিয়ে নতুন করে প্রতি হলে ৬ কোটি টাকার আসবাবপত্রের জন্য যে রিভাইজড ডিপিপি প্রস্তাবনা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের রুমের প্রতিটি চেয়ার বাবদ ৪,৮৩৮ টাকা, সেল্ফ সমেত টেবিলে ১৬,০০০ টাকা, উন্নত মানের খাটে ১২,৮০০ টাকা ও লকারে ১৭,৭৮৬ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে। তবে এই ডিপিপি এখনও খসরা পর্যায়ে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্যেও পাঠানো হয়নি এবং এ বছরের মধ্যে এগুলো নতুন হলে আসছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
তবে প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, রিভাইজড ডিপিপি অনুসারে শিক্ষার্থীদের যে খাট দেয়ার কথা এবং হল অফিসের যেসব আসবাবপত্র ক্রয় করার কথা সেগুলো বর্তমান ২ কোটি টাকা দিয়েই ক্রয় করে ফেলা হবে, যা পরবর্তিতে প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে সামঞ্জস্য করে নেয়া হবে।
প্রকল্প অফিস থেকে প্রথম দফায় বলা হয়, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে হল নির্মাণ কাজ। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ৪৯ ও ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের নতুন হলে ওঠানোর কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের হল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। ফলশ্রুতিতে পুরোনো হলগুলোর গণরুমেই জায়গা হয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের।
পরবর্তিতে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই শেষ হবে হল নির্মাণ কাজ। কিন্তু ২০২২ সালের জুন মাস চলে এলেও এখনও হলগুলোতে শুরু হয়নি পানি কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।
নতুন হলের লিফটের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি হলের জন্য নির্ধারিত লিফট ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। জার্মানিতে যেয়ে দেখে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।’
এএইচ