কি ঘটেছিল পদ্মা সেতু নিয়ে (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ১৫ জুন ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০৯:৫৬ পিএম, ১৫ জুন ২০২২ বুধবার
শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ আঁকড়ে ধরে রাখতেই পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্র করেছিলেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতেই বন্ধু হিলারী ক্লিনটনের প্রভাবকে কাজে লাগিয়েছেন ইউনূস। প্রকল্পে অর্থায়নে বিরত থাকতে বাধ্য করেছিল বিশ্ব ব্যাংককে। পরে, আবশ্য আদালতের রায়ে অভিযোগটি যে মিথ্যা তা প্রমাণিত হয়েছে। নিজেদের ভুলও স্বীকার করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
চিলে কান নিয়েছে, তাই ছুটোছুটি। ঋণের টাকা এক পয়সাও ছাড় না করেই বিশাল দুনীতির অভিযোগ। বলছিলাম, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনার কথা।
অভিযোগ প্রমাণে কোন তথ্য-উপাত্ত কিংবা দলিল দস্তাবেজ কিছুই নেই। হাতে শুধু এসএনসি লাভানিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার জব্দকৃত ডায়েরি। সেখানে নাকি পেন্সিল দিয়ে লেখা মন্ত্রী, সচিব ও উপদেষ্টা- কে কত পার্সেন্ট ঘুষের অঙ্গীকার করেছে।
ঘটানা এখানেই শেষ। আর যায় কই? ভিত্তিহীন উড়ো তথ্যে তদন্তে নামল বিশ্বব্যাংক। ১ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের কম সুদে সহজ শর্তের ঋণ খুব বেশি প্রয়োজন ছিল এদেশের। অনেকটা বাধ্য হয়েই তদন্তের সিদ্ধান্তে রাজি হলো বাংলাদেশ। চাইলো অভিযোগের প্রমাণ।
সাবেক সেতু সচিব রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, “যে লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের কথাও শোনা দরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের যে প্রসিডিউর, সে প্রসিডিউর অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের সাথে কথা বলে না।”
ঘটনার তদন্তে উড়ে এলো আইসিসির সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর গেব্রিয়েল লুইস মোরেনো ওকাম্পো ও তার তদন্ত দল। বলা নেই, কওয়া নেই অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই হুকুম জারি করতে লাগল শুধু মামলা নয়, সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, “আমাকে শুধু যে আসামি করেছে তা নয়, জেলেও দিয়েছে তারা। এই কার্যক্রমেও সন্তুষ্ট নয়, অর্থাৎ তারা চায় সৈয়দ আবুল হোসেন, মশিউর রহমান তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে এবং প্রয়োজন হলে তাদেরকে গ্রেফতার।”
স্বাধীন দেশে এ ধরণের খবরদারি অসম্মানজনক। প্রমাণ ছাড়া কোন গ্রেফতার নয় স্পষ্ট করল বাংলাদেশ। ২০১২ সালের ২৮ জুন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগ বিশ্বাস না করলেও শুধু সহ-অর্থায়নকারী হওয়ায় সরে যেতে বাধ্য হয় জাইকা, এডিবি, আইডিবি’র মত প্রতিষ্ঠানগুলো।
রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, “তারা চলে যাওয়াতে ইন্টান্যাশনালে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়নি। কারণ বিশ্বব্যাংকও বুঝতে পেরেছে যে, এতো বড় একটা মেগা প্রকল্পে না থেকে তাদের ঠিক হয়নি।”
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বিশ্ব ব্যাংক এসএনসি লাভানিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কানাডার মাউন্টেন্ট পুলিশের কাছে। এটি পরে মামলা হয়, গড়ায় আদালতে। টরেন্টোর সেই আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয় সব অভিযোগ। কলঙ্ক মুক্ত হয় বাংলাদেশ।
সাবেক সেতু সচিব আরও বলেন, “সেই রায়ে বলা হয় যে, এই অভিযোগগুলো সঠিক নয়। এগুলো গুজবের উপর ভিত্তি করে অভিযোগ। ইমেইলে যেসব কথাবার্তা বলছে যে আমি শুনেছি, একটি শোনা কথা আরেকটি শোনা কথাকে ডেকে আনে, একটি গুজব আরেকটি গুজবকে টেনে আনে। তো এভাবে যেগুলো করা হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নাই।”
এরপর পদ্মার পানি গড়িয়েছে অনেক। থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে তীলে তীলে গড়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেই ষড়যন্ত্রকারীরা এবার কি জবাব দেবে? তারা কি তাদের শাস্তি পাবে? নাকি ইতিহাসের আস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হবে?
উন্নয়নের মূলধারায় থাকা বাংলাদেশকে পেছনে ফিরিয়ে নিতেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে নানান ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেসময়ে ষড়যন্ত্র না হলে আরও কমপক্ষে ৪-৫ বছর আগে এই সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে পারতো এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতো।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবানা। তার কন্যা শেখ হাসিনা সে সময়ে সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই আজ এই সেতুটি তৈরি হয়েছে এবং সারাবিশ্বকে জানান দিয়েছে যে বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ এখন যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।
এএইচ