আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিশোর গ্যাং, আটক ১৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ১৬ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিন দিন বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ কর্মকাণ্ড। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়ায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, স্কুলগামী ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। বিভিন্ন স্পটে থেকে সুযোগ বুঝে লোকেজনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা রেখে দেয়। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে স্কুল-কলেজে ছাত্রীরা স্কুল কলেজে যেতে ভয় পায়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের লোকনাথ উদ্যান (টেংকের পাড়) থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ জন ছাত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ১৯ জনকে আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ।
আটককৃতরা হলো- শহরের মধ্যপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে জুম্মান উদ্দিন (১৫), ফুলবাড়িয়ার এ কে এম ফজলুল হকের ছেলে ফায়াজ ফারমিদ মোবিন (১৪), উত্তর পৈরতলার মো. সোহেল মিয়ার ছেলে মেরাজুল হক সৌরভ (১৭), মধ্যপাড়ার মুকুল পালের ছেলে সূর্য পাল (১৬), কাজীপাড়ার সুকুমার দাসের ছেলে ছানি দাস, পূর্ব পাইকপাড়ার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মো. রিপন (১৮), লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়) এলাকার আবু ছায়েদের ছেলে মো. বাবুল (২০), খৈয়াসারের এমদাদুল হকের ছেলে আশরাফুল হক পায়েল (১৮), পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি এলাকার আলমগীর ভূইয়ার ছেলে আলমাস ভূইয়া (২০), কাজীপাড়ার তরুণ বণিকের ছেলে দিপানজন বণিক, কান্দিপাড়ার আনিসুর রহমানের ছেলে রোহান রহমান ওয়াছি, পশ্চিম পাইকপাড়ার নাসির আহমদ খানের ছেলে জাফল উল্লা খান, হালদার পাড়ার সাইফুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের ছেলে মো. সাহিদ হাসান, বিজয়নগর উপজেলার পত্তন গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল হাসনাত আসিফ, আখাউড়া উপজেলার হিরাপুর গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে মো. সিয়াম ভূইয়া (১৭), নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সরকারের ছেলে পাপন সরকার (১৭), একই উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামের মো. জামিরুল ইসলাম ও নবীনগর উপজেলার খরিয়ালা গ্রামের আবদুল হেকিমের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যরা হালদারপাড়ার সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেনের সামনের রাস্তা, কাজীপাড়ার সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, হালদারপাড়া গভ. গালর্স উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, মৌড়াইল অবকাশ এলাকার ফারুকী পার্কের সামনে, সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেলের সামনে, পাইকপাড়া আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, লোকনাথ উদ্যান (টেংকেরপাড়), ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক মার্কেটের সামনেসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে স্কুলের ছাত্রীদেরকে ইভটিজিং করে।
বিশেষ করে, ফারুকী পার্ক ও লোকানাথ উদ্যানে (টেংকেরপাড়) কিশোর গ্যাংয়ের পদচারণা থাকে বেশী। শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওই দুটি জায়গায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। সুযোগ পেলে পথচারীদের ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
গত ১৫ দিনে লোকনাথ উদ্যানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিপক্ষ কিশোরদের মারধোরসহ বেশ কয়েকটি অপরাধ সংঘঠিত করে। প্রায় এক মাস আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এক কলেজ ছাত্রীকে মারধোর করে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক নেতা এবং শহরের প্রভাবশালী পরিবারের হওয়ায় তাদেরকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। তাই দিন দিন বাড়ছে তাদের দৌরাত্ম্য।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতায় আমরা আতঙ্কিত। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা আরো জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, ১৯ জন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ড্রেস পরিহিত ছিল। লোকনাথ উদ্যানে প্রায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করে। তাদের অনেকের পকেটেই চাকু থাকে।
ওসি বলেন, স্কুলের প্রধান ও তাদের অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়েছে। আটককৃতদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনএস//