সৌদিতে দুপুরে তিন ঘণ্টা কাজ নিষিদ্ধ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ১৭ জুন ২০২২ শুক্রবার
সৌদি আরব সরকার বেসরকারি খাতের শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য বেলা বারটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সময়ে কাজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, পনেরই জুন থেকে কার্যকর হয়ে এটি পনেরই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। অর্থাৎ এই তিন মাস কোন শ্রমিককে দিয়ে দুপুরে এই তিন ঘণ্টা কাজ করানো যাবে না।
দেশটিতে সাধারণত দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতিসহ সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মঘন্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এখন যারা সরাসরি মাঠে ঘাটে বা সূর্যালোকের নীচে কাজ করেন, তাদের দিয়ে বেলা বারটা থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টা কোন কোম্পানি বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কাজ করাতে পারবে না।
কোন কোম্পানি এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেবে দেশটির সরকার। এ জন্য হটলাইন নাম্বারও দেয়া হয়েছে, যাতে দুপুরে কাজ করতে বাধ্য হলে শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।
তিন ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞার কারণ কী?
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর মোহাম্মদ রেজায়ে বারী বলছেন, গরমের মধ্যে যেন শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করানো হয়, সে জন্যই সৌদি সরকারের এমন নির্দেশনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন দুপুরে প্রচণ্ড গরম। এই গরমে খোলা জায়গায় শ্রমিকদের কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। সে কারণেই এ নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে এই তিন মাস সূর্যের তাপ থাকে অনেক বেশি। সে কারণেই নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এর আগেও সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরণের নির্দেশনা দিয়েছিলো।
জানা গেছে, গত বছরই এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা অমান্যের অপরাধে ২৮০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও শ্রমিক প্রতি তিন হাজার রিয়াল জরিমানা করেছিলো সৌদি আরবের শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে রক্ষণাবেক্ষণ বা তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোতে কাজ করছে - এমন শ্রমিকদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না। আবার যেসব অঞ্চলে সূর্যের তাপ সহনশীল সেখানেও এটি কার্যকর হবে না।
বিশ্বব্যাংকের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ডেটা অনুযায়ী, প্রতিবছর সৌদি আরবে মধ্য জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। কোন কোন স্থানে সেটি ৪৫ ডিগ্রি থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে। আর দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজার
এখানে বলে রাখা ভালো বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসেবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। সেখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশিই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
ফলে দুপুরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কাজ করার মতো অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে তারা কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার-বেসরকারি হিসেব থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় দশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে কাজ করছেন। এদের বেশিরভাগই দেশটির নির্মাণসহ নানা খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
কোন দেশগুলোয় বাংলাদেশি শ্রমিকরা বেশি যান
বড় শ্রমবাজার হিসেবে সৌদি আরবের পরেই আছে ওমান, কাতার, বাহরাইনের মতো দেশগুলো। জর্ডান, সিঙ্গাপুর, রোমানিয়া, ইত্যাদি দেশেও অল্প কিছু করে কর্মী যাচ্ছেন।
কম বেশি মিলিয়ে বৈধভাবে ১৭২টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা যাচ্ছেন। কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপ এক সময় বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার ছিল।
এখনো এসব দেশে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন। তবে এসব দেশে বৈধভাবে এখন কর্মীরা যেতে পারছেন না। এছাড়া বৈধভাবে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বলিভিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা সম্প্রতি যেতে শুরু করেছেন। সূত্র: বিবিসি
এসি