ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

টানা ৭০ বছর হাওয়া খেয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ পিএম, ২০ জুন ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ২০ জুন ২০২২ সোমবার

পরনে লাল শাড়ি, নাকে নথ, হাতে ও গলায় গয়না। মা অম্বার সাধক তিনি। তাই দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে এ রকম পরিধানেই অভ্যস্ত এই সন্ন্যাসী। এই ধরনের বেশভূষার জন্যেই তার ভক্তদের কাছে ‘মাতাজি’ বা ‘চুড়িওয়ালা মাতাজি’ নামে পরিচিত ছিলেন।

তবে, তিনি যে শুধু এই কারণের জন্য বিখ্যাত, তা নয়। দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে পানি বা কোনও খাবার স্পর্শ করেননি মাতাজি। কোনও সাধারণ মানুষও জল না খেয়ে ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারেন না। কিন্তু এই সন্ন্যাসী কী করে এত দিন সুস্থ হয়ে বেঁচে ছিলেন?

শুধু মাত্র ভারতেই নয়, আমেরিকা, অস্ট্রিয়া, জার্মানির বহু চিকিৎসক এবং গবেষক মাতাজির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। মানবদেহে লেনোমোরেলিন এবং লেপটিন হরমোন উপস্থিতির ফলে বার বার মানুযের খিদে পায়।

তারা অনুমান করেছিলেন, সন্ন্যাসীর শরীরে এই হরমোনগুলির উৎপাদন প্রায় শূন্য। তাই খিদে পাওয়ার প্রবণতাও কম। ২০০৩ সালে সুধীর শাহ আমদাবাদের স্টারলিং হাসপাতালে একটি বদ্ধ ঘরে রেখে বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা, স্ক্যান ইত্যাদি করেন।

মাঝে মাঝে রোদ পোহাতে সন্ন্যাসী বাইরে যেতেন ঠিকই, কিন্তু তাকে কখনই কোনও রকম খাবার দেওয়া হয়নি। প্রায় ১০ দিন এ ভাবে থাকার পর চিকিৎসকরা লক্ষ করেছিলেন, মাতাজি বিগত ১০ দিন যাবৎ মল বা মূত্র ত্যাগ করেননি।

শরীরের বর্জ্য পদার্থ বর্জন না করাও মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর। এত কিছু সত্ত্বেও মাতাজি শারীরিক দিক দিয়ে একদম সুস্থ। পরে আবার ২০১০ সালে তার উপর গবেষণা করা হয়।

এমন অনেকেই রয়েছেন, পেশাগত কারণে যাঁদের বহু দিন না খেয়েও থাকতে হয়। ভারতীয় সেনাদের উদাহরণ তার মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসকদের ধারণা, মাতাজি কী ভাবে দিনযাপন করতেন তার সমাধান খুঁজে পেলে সকলের সামনে এক নতুন পথের দিশা দেখা যাবে।

কিন্তু পর পর দু’বার গবেষণার পরেও কোনও সমাধান খুঁজে পাননি কেউই। বরং, তার জিভের উপর অদ্ভুত আকারের একটি ছিদ্র লক্ষ করেছিলেন চিকিৎসকেরা।

মাতাজির মতে, মা অম্বাই এই ছিদ্রের মাধ্যমে তার মুখে খাবার এনে দেন, কোনওদিনই তাকে অভুক্ত রাখেননি তার মা। তাই আর আলাদা করে কিছু খাওয়ার দরকার পড়ত না মাতাজির। তার আসল নাম অবশ্য প্রহ্লাদ জানী। গুজরাতের চারাদা গ্রামে তার জন্ম। সাত বছর বয়সে তিনি বাবা-মাকে ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন।

তখনই তিনি আধ্যাত্মিক শক্তির উপস্থিতি টের পান। ১৯৭০ সাল অবধি তিনি চারাদা গ্রামের নিকটবর্তী জঙ্গলে একটি গুহায় থাকতেন। গব্বর হিল এলাকায় একটি তার একটি আশ্রমও রয়েছে।

২০২০ সালের ২৬ মে মাতাজি প্রয়াত হন। তার মৃত্যু নিয়ে এখনও রহস্য রয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু নামকরা চ্যানেল থেকে ‘চুড়িওয়ালা মাতাজি’কে নিয়ে ডকুমেন্টরি বানানো হয়েছে। তাকে ঘিরে এখনও প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর পাওয়া এখন অসম্ভব। সূত্র: আনন্দবাজার

এসি