পদ্মা সেতুর কি বিশেষত্ব, যুগে যুগে কেন মূল্যায়ন হবে? (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩১ এএম, ২৫ জুন ২০২২ শনিবার | আপডেট: ১১:৪৪ এএম, ২৫ জুন ২০২২ শনিবার
প্রমত্তা নদীর উপরে সবচেয়ে বড় সেতু পদ্মা। নির্মাণে পরতে পরতে ছিল চ্যালেঞ্জ। সব বাধা টপকে সেতু পেল জাতি। প্রশ্ন আসতে পারে এই সেতুর বিশেষত্বই বা কি? কেন সেতুটি অন্যভাবে মানুষ মূল্যায়ন করবে যুগে যুগে।
বিশ্বে পানি প্রবাহ বিবেচনায় আমাজান শীর্ষে, দ্বিতীয় অবস্থানে পদ্মা। এই উত্তাল থাকে প্রায় বারো মাস। যে কোন সময় যে কোন দিকে নিতে পারে মোড়।
এরকম নদীতে এ ধরণের একটি সেতু নির্মাণই হলো সবচেয়ে বড় মুন্সিয়ানা। কূল-কিনারা যার নেই, সেখানে মাওয়া-জাজিরাকে এক সুতায় বাধাটাই সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব।
সেতুটি একেবারে সোজাও নয়। ইংরেজী বর্ণমালার ‘এস’র মত। এতে রাতে যখন চালকরা গাড়ি চালনা করবেন তখন এক গাড়ির আলো অন্য চালকের চোখে কোন ধরণের বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে না।
পদ্মা হলো এলুভিয়াল সয়েল রিভার। নিজেই নিজের ভেতরের মাটি উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে খনন কিংবা ভরাট করতে পারে। সেই বাস্তবতায় মাটির ১২০ থেকে ১২৭ মিটার গভীরে পাইল বসানো হয়েছে। পাইলিংয়ের দৃঢ়তার কারণে যত পরিবর্তনই আসুকবিন্দুমাত্র টলাতে পারবে না সেতুকে।
পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক পরামর্শক বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামিম জাহান বসুনিয়া বলেন, “এটার তলে যখন ঢালাই করা হয়েছে তখন পানির মধ্যে ঢালাই করা হয়। প্রত্যেকটা স্তর ছিল কঠিন।”
বিশেষত্বের কি আর শেষ আছে? সেতুটি ভূমিকম্পসহনশীল।
পদ্মাসেতুর ৬.১৫ কিলোমিটারের, এখানে ৪১টি স্প্যান ৪২টি খুঁটি রয়েছে। আর আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের বিশেষত্ব এমন যে এটি ভূমিকম্পন সহনশীল। খুঁটি থেকে ভূমিকম্পের কম্পন যেন মূল সেতুতে না পৌঁছায় সেজন্য ফ্রিকশান পেন্ডলাম বেয়ারিং নামে একটি বিশেষ ধরনের বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়। এর ফলে কম্পন কোনভাবেই মূল সেতুকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। সুরক্ষা দেবে পদ্মা সেতুকে।
নিয়মমত সেতু পরিচালনা আর রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটি অনায়েশেই কমপক্ষে একশ’ বছর সচল থাকবে। কোন ধরণের জটিলতা ব্যতিরেখেই।
সেতুর নীচ তলায় একটি লাইন বসলেও এর উপর দিয়ে দ্বি-তল রেল চলার মত উচ্চতার সুযোগ রাখা হয়েছে, স্প্যানে।
এটাও বলা হচ্ছে, সেতুটি আন্তর্জাতিক রুটের সাথে এমনভাবে পরিকল্পনা করে করা হয়েছে যে ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপে ট্রেন যোগাযোগেও কাজে আসবে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “ট্রেনটা আবার দোতলায় চেঞ্জ হবে। ডাবল স্টেইক কনটেইনার যাবে, যেটা অনেকেই জানেই না। একটা কনটেইনারের উপর আরেকটা কনটেইনার, অনেক বেশি লোড। এটা ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, যার জন্য এটা আমরা করেছি।”
পদ্মায় বহু নতুন নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে। বলা হচ্ছে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী, গবেষক ও প্রকৌশলীর কাছে এগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন বলেন, “ইঞ্জিনিয়ার লিডারশীপ এবং পলিটিক্যাল লিডারশীপ- এই টোট্যাল লার্নিং প্রসেসটা জাতির জন্য বড় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”
আশার কথা হলো, সেতু অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে বহুদূর। সাথে প্রকৌশল কিংবা স্থাপত্য বিদ্যায় দেশের জনসম্পদ তৈরি ও জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে দিল এই পদ্মা সেতু।
অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন বলেন, “যে নলেজ এখানে ইমপোর্টেট হয়েছে এবং এক্সপোর্টেট হয়ে আমরা সেই নলেজটা ধারণ করতে পেরেছি।”
এএইচ