ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পদ্মাসেতু আত্মমর্যাদার প্রতীক: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ২৫ জুন ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০১:২৯ পিএম, ২৫ জুন ২০২২ শনিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের ‘গর্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি এখন প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ পদ্মাার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি আজকে বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। সেই সাথে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে এবং ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আজকে আমরা এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছি। এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পারের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে শুধু তাই নয়। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক।”

তিনি বলেন, “এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর আমাদের প্রত্যয় এবং এই জেদ যে, এই সেতু আমরা তৈরী করবোই। যদিও ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতুর নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়। কিন্তু আমরা কখনো হতোদ্যম হইনি, হতাশায় ভূগিনি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি।”

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ মন্ত্র ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’র পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি। 

“আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা কোনদিন মাথা নোয়াব না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও কখনও মাথা নোয়াননি। তিনি আমাদের মাথা নোয়াতে শেখান নাই, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। “

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁর এবং তাঁর সরকারের পথচলা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণ বিষয়ক সূচনা বক্তৃতা করেন। তিনি প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার এন্ড সুপারভিশন কনসালটেন্ট ররার্ট জন এভিসসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সঙ্গে অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত দেশের বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে থিম সংগ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্মারক ডাক টিকেট, সুভ্যেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিল মোহর এবং ১শ’ টাকা মূল্যের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকারক কোম্পানীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি পদ্মা সেতুর একটি রেপ্লিকাও উপহার দেওয়া হয়। নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটো সেশনেও অংশ গ্রহণ করেন তিনি।

এরপরই প্রধানমন্ত্রী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিয়ে সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং বাংলাদেশের অটিজম আন্দোলনের পথিকৃৎ সায়মা ওয়াজেদ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর  গাড়ি বহর নিয়ে সেতুটি অতিক্রমের সময় সেতুটির মাঝ বরাবর নেমে সেতু এবং প্রমত্তা পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তিনি বিমান বাহিনীর একটি মনোজ্ঞ ডিসপ্লেও উপভোগ করেন।

এএইচএস