ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সাপের কামড়ে দুই জনের মৃত্যু, নারী আহত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:১৪ পিএম, ২৫ জুন ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৮:২৭ এএম, ২৬ জুন ২০২২ রবিবার

নিহত শিপু ও ইমরান আহমেদ

নিহত শিপু ও ইমরান আহমেদ

মৌলভীবাজারে বন্যা কবলিত এলাকায় সাপের কামড়ে আরো এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া উপজেলায় মারা গেলেন দুইজন। এছাড়া সাপের কামড় খেয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন জুড়ি উপজেলার এক নারী।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুমায়ূন কবির জানান, গত ২৩ জুন রাতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের পদুনাপুর গ্রামে বন্যার পানিতে একটি সাপ ইমরান আহমদ (১৮) নামের এক তরুণকে কামড় দেয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কোন সাপে কামড় দিয়েছে, তা নিশ্চিত করতে না পারায় সিলেটে পাঠানো হয়।

কাগাবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমন মোস্তফা ইমরান জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইমরানকে সাপে কামড় দেয়। পরে স্থানীয়রা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর ভ্যাকসিন না দেয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে শুক্রবার সকালে ইমরান আহমদের মৃত্যু হয়। 

পদুনাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহেল আহমদ জানান, “ইমরানের বাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় তার পরিবার আমাদের বাড়িতে এসে ওঠেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আমাদের বাড়িতে আসার সময়েই একটি বিষাক্ত সাপ ইমরানকে কামড় দেয়।”

তিনি জানান, প্রথমদিকে তেমন ব্যথা না হওয়ায় ইমরানের পরিবারের প্রাথমিক ধারণা ছিল, এটা ধোরা বা বিষহীন কোনো সাপ হতে পারে। রাতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণায় সে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেটে রেফার করেন। ভোর রাতেই তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাপে কাটার ভ্যাকসিন এন্টি ভেনম দেয়ার প্রস্তুতি নিতেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এদিকে গত ২১ জুন রাতে জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বাদে মনসুর গ্রামের মাখন মিয়ার ছেলে শিপু আহমদ বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান।

কুলাউড়া পৌরসভার ৮নং ওর্য়াডরে কাউন্সলির আতাউর রহমান চৌধুরী সোহলে জানান, গত ২০ জুন সোমবার রাতে কুলাউড়া উছলাপাড়ার পশ্চিম পাশের জলাধারে মাছ ধরতে নামেন শিপু। এ সময় তাকে একটি সাপে কামড় দিলে একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে পরিবারের লোকেরা রাতেই কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আল মামুন জানান, সাপের কামড়ে মৃত শিপুকে বাঁচাতে তার পরিবার ওঝার শরণাপন্ন হয়। ওঝা এসে ওই এলাকায় শিপুকে ছোবল দেয়া সাপের খোঁজ করেন। কিন্তু সাপটিকে খুঁজে না পেয়ে তার পক্ষে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি চলে যান।

এছাড়াও গত ২১ জুন রাতে জেলার জুড়ী উপজেলায় মাজেদা বেগম (৩০) নামে এক নারী সাপের কামড়ে আহত হন।

মাজেদা বেগমের স্বামী খোকন আহমদ জানান, বাড়ীতে বন্যার পানি ওঠায় তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উপজেলার  চৌমুহনীতে নিজ ফার্নিচার দোকানের গোডাউনে (গুদামে) ওঠেন। এ সময় গোডাউনের কাঠের নিচে লুকিয়ে থাকা একটি সাপের কামড়ে আহত হন তার স্ত্রী। পরে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ীতে ফিরেছেন মাজেদা বেগম।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী সফিক আহমদ জানান, কামড় দেওয়া সাপটি ছিলো দুধরাজ সাপ। উৎসুক জনতা সেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাজহারুল ইসলাম জানান, সাপের কামড়ে আহত নারীকে চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র জানান, বর্তমানে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার গ্রামাঞ্চল। তলিয়েছে গ্রামীণ ঝোপঝাড়ও। সাপের আবাসস্থলগুলোও তাই এখন পানিতে নিমজ্জিত। যার ফলে শুকনো জায়গাতেই সাপেরা আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করবে। তাই এই সময়ে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

এনএস//