মেডিটেশনে ভ্যাট: সামাজিক মাধ্যমে সরব নেটিজেনরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ২৬ জুন ২০২২ রবিবার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'নো ভ্যাট অন মেডিটেশন' শীর্ষক ক্যাম্পেইনে মেডিটেশনের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য মেডিটেশন চর্চাকারী মানুষ। চিকিৎসক, কবি, গৃহিণী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার নানান বয়সী ধ্যানীরা সরব রয়েছেন ইউটিউবে।
হাতে 'নো ভ্যাট অন মেডিটেশন' লেখা কাগজে তুলে ধরছেন তাদের দাবি। ভিডিওতে তারা জানাচ্ছেন, মেডিটেশনের উপকারিতা ও ভ্যাট প্রত্যাহারে তাদের দাবির কথা।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে মেডিটেশনের ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহারের এ দাবিতে নো ভ্যাট ক্যাম্পেইনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশিসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরাও।
কবি অসীম সাহা জানান, মেডিটেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়, চিন্তা-চেতনারও বিকাশ হয়। তাই মেডিটেশনের ওপর যেন কোনো ভ্যাট আরোপ করা না হয়। এটা যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন; শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে- তা নয়; ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তিনি মানবিক মানুষ এবং মানবিক কাজে তার ভূমিকা সর্বত্র নন্দিত। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীরও এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত এবং তিনি যদি হস্তক্ষেপ করেন তবে এ ধরনের বৈপরীত্যমূলক কাজে যে ক্ষতি হয় সে ক্ষতিটা অন্তত হবে না এবং এ থেকে বহু মানুষ উপকৃত হবে।
নো ভ্যাট অন মেডিটেশন নিয়ে একটি গানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গানটির কথা লিখেছেন গীতিকার দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সুর করেছেন জাহিদ বাশার পংকজ। আর গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী মোহনা।
ডা. মো. শাহ আলম ইয়োগা ইন্সট্রাক্টর ও নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারী। তিনি ভিডিওতে দুটি কারণে মেডিটেশন এবং যোগ-ব্যায়ামের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন জানান।
প্রথমত, মেডিটেশন করলে এমন কিছু রোগের নিরাময় হয় বা নিয়ন্ত্রণ হয় যা মেডিকেল সায়েন্সে প্রচলিত চিকিৎসায় হয় না। যেমন- মাইগ্রেন, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, ওবেসিটি, থাইরয়েড প্রবলেম, আইবিএস ইত্যাদি। এছাড়া তোতলামি, শ্রবণশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর মেডিটেশন। মেডিটেশনের মাধ্যমে এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত চর্চায় মেজাজ খিটখিটে হয় না, উগ্র ভাব দূর হয়। মানুষ ইতিবাচক হয়। মানুষের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
আর দ্বিতীয় যে কারণে মেডিটেশনের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি, সেটি হলো- নিয়মিত ধ্যান চর্চার ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেকখানি কমে যায়। এছাড়া ব্যাক পেইন, হাঁটুব্যাথাসহ বহুবিধ উপকার মেলে মেডিটেশনে। তাই মেডিটেশনের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি শুধু নয়, বরং এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত। যেন প্রতিটি স্কুলের বাচ্চারা মেডিটেশন এবং যোগ-ব্যায়াম শেখে।
রেহানা আক্তার রুমা। ইন্টারন্যাশনাল কনসালট্যান্ট এন্ড করপোরেট ট্রেইনার। ইউটিউব ভিডিওতে তিনি বলেন, ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ইতিবাচক মানুষ অর্থাৎ ভালো মানুষের বিকল্প নেই। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য স্থির হওয়া খুব প্রয়োজন; যা কিনা মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।
হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে ধরেন এ ক্যাম্পেইনে। হবিগঞ্জ থেকে বরিশাল, কুষ্টিয়া থেকে পঞ্চগড়, রাজশাহী, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অংশ নিচ্ছেন এ ক্যাম্পেইনে।
বাংলাদেশে মেডিটেশনের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে তাদের দাবি, মেডিটেশন যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্যসেবারই অংশ। তাই এর ওপর ভ্যাট নয়, বরং এটা চর্চায় অন্য সবাইকে উৎসাহ দিতে নানা উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এনএস//