পদ্মা সেতু পেরিয়ে প্রথম ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে তারা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ২৬ জুন ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ২৬ জুন ২০২২ রবিবার
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মেদ হোসেন। স্থানীয় পুলিশ লাইনস এলাকায় রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি জানান, তিনি খুবই আনন্দিত, উদ্বেলিত। বাধাহীনভাবে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসে পৌঁছেছেন। এটি একদিন আগেও সম্ভব হয়নি। যে সময়ে আমরা এসে পৌঁছেছি তা স্বপ্নের চেয়ে বেশি প্রাপ্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক দৃঢ় মনোবলের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
সকাল ৮ টা ২৫ মিনিটে গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে চা- বিস্কিট খাওয়ার সময়ে প্রাইভেটকারের যাত্রী আব্দুর রহমান জানান, সকাল ৬ টায় প্রাইভেট কারে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে গোপালগঞ্জ এসে পৌঁছেছেন। আরো আগে আসতে পারতেন। কিন্তু, আজ প্রথম দিন হবার কারণে টোল প্লাজায় কিছুটা যানজটে পড়ে তাদের দেরি হয়েছে। প্রাইভেটকারের ওই যাত্রী জানান, আগে ফেরি ঘাটে যে সময়টা দেরি হতো, এখন সেই সমযের মধ্যেই পদ্মা সেতু পার হয়ে অনায়াসেই গোপালগঞ্জ চলে আসা সম্ভব। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ আসা অপর মোটরসাইকেল আরোহী তানভীর আহম্মেদ অপু মিয়া বলেন, আগামী কোরবানীর ঈদে যারা বাড়ি আসবেন তাদেরকেও ঝামেলা পোহাতে হবেনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য কষ্ট করতে হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এখন ইচ্ছা করলেই যখন খুশি তিনিসহ অন্যরা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের বাড়িতে আসতে পারবেন, আবার যেতেও পারবেন।
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জ থেকে আজ রোববার সকালে যারা ঢাকা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যেও উচ্ছাসের কমতি নাই। আজ প্রথম দিনই তারা বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন এ ভেবে যে, তাদের সারাজীবনের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে তারা ঢাকা যেতে পারছেন।
পদ্মা সেতু আজ রোববার জনসাধারণের জন্য অর্থাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় গোপালগঞ্জের অনেকেই ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ঢাকা যাতায়াত করছেন। দীর্ঘ বছরের যে কষ্ট আর বঞ্চনা সয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সে দুঃখ কষ্টের লাঘব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেতু উদ্বোধন করায় মনের খুশিতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অনেকেই কোন কাজ না থাকলেও ঢাকায় গিয়েছেন।আবার অনেকেই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন, আবার বিকেলে ফিরে যাবেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে তাদের এ যাওয়া-আসা।
অনেকেই মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসেছেন, আবার ঢাকার দিকে রওনা হয়েছেনও অনেকেই। এমনিতেই গোপালগঞ্জবাসীর মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান এ গোপালগঞ্জ। জাতির পিতার মেয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবলের কারণে আজ খরস্রোতা পদ্মার বুকে নির্মিত হয়েছে এ অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যদিও এখন আর পদ্মা সেতু স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে।
এক সময়ের ফুটবলের জাতীয় টিমের ক্যাপ্টেন ইলিয়াস হোসেন আজ রোববার “ইমাদ পরিবহন” এর সকাল ৮টার গাড়িতে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি আর অল্প সময় পরই পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবো। আমার যেমন স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে, তেমনি এ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষেরও স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে।আর এ জন্য আমি প্রধানন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, আর সেই সাথে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
তানজিমা তাসনিম নামের এক যাত্রী তাঁর স্বামীর সাথে খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন “ফাল্গুনী” পরিবহনে করে। তিনি বলেন, আগে খুলনা থেকে ৭/৮ ঘন্টায় ঢাকায় যেতে হতো। আর এখন আমরা ফেরিঘাটের সেই কষ্টকে ভুলে অর্ধেক সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌছাতে পারবো। আমাদের এটা এক আনন্দের বিষয়। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের ড্রাইভার সেলিম মিয়া এবং টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের ড্রাইভার স্বপন আহম্মেদ বলেন, এখন আর আমাদেরকে বেশি সময় ব্যয় করে ঢাকায় যেতে হবে না। আগে যদি দুই ট্রিপ দিতে পারতাম, তাহলে এখন তিন ট্রিপ দিতে পারবো। আমাদের যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি যাত্রীদেরও সুবিধা হয়েছে।
এসি