বাইজীদের বিরুদ্ধে হচ্ছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ২৭ জুন ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৯:২০ এএম, ২৭ জুন ২০২২ সোমবার
নাট খোলা বাইজীদ
বহুলালোচিত পদ্মাসেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায়। যে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বলেই জানা গেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ে ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত। সেতুর ক্ষতির উদ্দেশ্যেই।
বাইজীদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেছেন, বায়েজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।
এর আগে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার বিকেলে রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন পটুয়াখালীর যুবক বাইজীদ। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে। এমন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’
এদিকে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই আইনের ১৫ (খ) ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউজ, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে আইনে।
এদিকে, বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছি যে, সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই কাজ করেছে। আমরা বিস্তারিত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানাব।’
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বাইজীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও পরীক্ষা করে সিআইডি জানিয়েছে, তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন।
সিআইডি আরও জানায়, বাইজীদের মোবাইল ফোন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই তারা দেখা গেছে, নিছক হেয়ালি নয়, পরিকল্পিতভাবে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলেছেন এ যুবক।
পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। রোববার সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বাইজীদ সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও ধারণ করছিলেন, তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহো।’
আর নাট হাতে নিয়ে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের...পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
এনএস//