সোশাল ব্লেড ইউটিউব র্যাংকিং কি, কেন, কীভাবে?
সালাউদ্দিন সেলিম
প্রকাশিত : ০১:২৬ পিএম, ২৮ জুন ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৩৫ পিএম, ২৮ জুন ২০২২ মঙ্গলবার
সালাউদ্দিন সেলিম
সকল মিডিয়া এবং ইউটিউব চ্যানেলের প্রতি সম্মান রেখে, স্বতন্ত্রভাবে সকলের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার উদ্দেশ্যে সোস্যাল ব্লেডের র্যাংকিং সম্পর্কে বলছি।
সারাবিশ্বে বর্তমানে মোট অ্যাকটিভ ইউটিউভ চ্যানেলের সংখ্যা প্রায় ৫১ মিলিয়নের উপরে। কনটেন্টের ধরন অনুযায়ী ইউটিউব প্রতিটি চ্যানেলকে ১৫টি ক্যাটেগরির যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়।
এই ক্যাটেগরিগুলো হলো- Film & Animation, Autos & Vehicles, Music, Pets & Animals, Sports, Travel & Events, Gaming, People & Blogs, Comedy, Entertainment, News & Politics, Howto & Style, Education, Science & Technology, Nonprofits & Activism.
একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করার সময় দেশের নাম উল্লেখ করতে হয় এবং দেশের নাম উল্লেখ করার বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত, অর্থাৎ এক দেশে বসে আরেক দেশের নাম নির্বাচন করলে ইউটিউবের পক্ষ থেকে তাতে কোনো বাধা নেই। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় ইউটিউব চ্যানেলই সাধারণত ইউএসএ কিংবা ইউকের নাম করে কারণ অতীতে মনেটাইজেশন পাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না, তাই অন্য দেশের নাম উল্লেখ করলে মনেটাইজেশনের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ পাওয়া যেত। ২০১৭ সালের পর থেকে ইউটিউব বাংলাদেশের নাম মনেটাইজেশনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। তাই ইউটিউব তার ১৫টি ক্যাটেগরির বাইরেও দেশের তালিকা অনুযায়ীও চ্যানেলগুলোকে ভাগ করে থাকে।
যাই হোক, এবার আসি সোশাল ব্লেড র্যাংকিংয়ের কথায়। সোশাল ব্লেড হচ্ছে ইউটিউব সার্টিফাইড একটি র্যাংকিং নির্ধারণকারী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ইউটিউব ছাড়াও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার তথ্য তারা প্রকাশ করে। এই সোশাল ব্লেড মূলত সর্বশেষ ৩০ দিনের তথ্য নিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের পরিপূর্ণ র্যাংকিং প্রকাশ করে, তবে তাদের ওয়েবসাইটে থাকা অপশন অনুযায়ী একদিন, তিনদিন, সাতদিন, ১৪ দিন, ৩০ দিন ইত্যাদি হিসেবে র্যাংকিং দেখা যায়।
সোশাল ব্লেড অনেকগুলো ক্যাটেগরিতে ইউটিউব চ্যানেলের র্যাংকিং করে থাকে। যেমন: দেশভিত্তিক সেরা তালিকা, বিশ্বব্যাপী সেরা তালিকা, ক্যাটাগরিভিত্তিক সেরা তালিকা, সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সেরা তালিকা, ভিডিও ভিউসভিত্তিক সেরা তালিকা এবং বিশেষ র্যাংকিং এসবি র্যাংক বা সোশাল ব্লেড র্যাংক।
এই বিশেষ এসবি র্যাংক করার ক্ষেত্রে সোশাল ব্লেড চারটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তা হলো সর্বশেষ ৩০দিনে চ্যানেলের ভিডিও ভিউস, চ্যানেলে আগত সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা, আপলোডেড ভিডিওর পরিমাণ এবং ট্রেন্ডিং ভিউ অর্থাৎ আপলোড দেওয়ার সাথে কত দ্রুততম কার ভিউ বেশি হলো।
একাধিক তথ্য বিবেচনায় এসবি র্যাংক করা হয় বলে অনেক সময় অনেক বেশি সাবস্ক্রিপশনওয়ালা চ্যানেল কিংবা বেশি ভিউস পাওয়া চ্যানেলগুলোও এসবি র্যাংক থেকে পেছনে পড়ে যায়। সম্প্রতি যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল তার চেয়ে বেশি সাবস্ক্রিপশন ও বেশি ভিউস পাওয়া চ্যানেলকে পেছনে ফেলে এসবি র্যাংকয়ে বাংলাদেশের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় অর্জন, শুভ কামনা যমুনা টিভির জন্য।
এবার একটু ডিটেইলস ব্যাখ্যা করি। এই লেখায় একটি ছবি সংযুক্ত করেছি, যেটি সোশাল ব্লেড থেকেই নেওয়া। এখানে বাংলাদেশে ১০ মিলিয়ন পার হওয়া তিনটি চ্যানেলের নাম উল্লেখ করেছি। এগলো হলো- সময় টিভি, যমুনা টিভি এবং মাহা ফান টিভি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সাবসক্রিপশন ও বেশি ভিউস সংবলিত ইউটিউব চ্যানেল সময় টিভি। তাহলে প্রশ্ন থাকতে পারে বাংলাদেশের সেরা তালিকায় সময় টিভি কেন নেই? উত্তর হলো- ইউটিউব চ্যানেলে উল্লেখ দেশের তালিকায় সময় টিভি আমেরিকার তালিকাভুক্ত একটি চ্যানেল। তাই যখন বাংলাদেশের র্যাংকিং তালিকায় সময় টিভিকে খোঁজা হয় তখন তাকে পাওয়া যায় না। যমুনা টিভি যেমন এসবি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের তালিকায় প্রথম, তেমনি সময় টিভি আমেরিকার চ্যানেলগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ৫০তম। উল্লেখ্য যে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ইউটিউব চ্যানেলের সংখ্যা আমেরিকাতেই।
এরপর যমুনা টিভির চ্যানেল ক্যাটাগরি News & Politics এবং সময় টিভির চ্যানেল ক্যাটাগরি Peoples & Blog। সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চ্যানেল রয়েছে Peoples & Blog ক্যাটাগরিতে, কারণ এটি ইউটিউবের একটি ডিফল্ট ক্যাটাগরি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ক্যাটাগরির চ্যানেলগুলোকে র্যাংকিংয়ের জন্য অনেক বেশি চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
এখানে তুলে ধরা ছবিতে লক্ষ করুন, এখানে সারা বিশ্বের প্রায় ৫১ মিলিয়ন চ্যানেলের মধ্যে এই তিনটি চ্যানেলকে তুলনা করে দেখিয়েছি। এখানে লক্ষ করলে দেখবেন এই ৩টি চ্যানেলের মধ্যে সারাবিশ্বের র্যাংকিং বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে সময় টিভি, দ্বিতীয় মাহা ফান টিভি এবং তৃতীয় যমুনা টিভি।
প্রশ্ন থাকতে পারে যমুনা টিভি তৃতীয় হয়েও কীভাবে প্রথম হলো? শুরুতেই বলেছিলাম সর্বশেষ ৩০ দিনের তথ্য নিয়ে এই এসবি র্যাংকিং। সম্প্রতি পদ্মাসেতুর কাভারেজে যমুনা টিভি একদিনেই ভিউস পেয়েছে প্রায় চার কোটি, সেখানে সময় টিভি ভিউস পেয়েছে প্রায় দেড় কোটি। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি ভিউ পেয়েছে যমুনা টিভি। গত এক মাসে যমুনা টিভির প্রতিদিনের গড় ভিউস ১৭ মিলিয়ন প্লাস এবং সময় টিভির প্রতিদিনের গড় ভিউস ১৫ মিলিয়ন প্লাস। তাই গত ৩০ দিনের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য যমুনা এগিয়েছে অনেক দূর। তবে সারা জীবনের বিবেচনায় সারা বিশ্বের র্যাংকিং হিসেবে যদি এই ছবিতে লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন-
সাবসক্রিপশন র্যাংকে- প্রথম সময় টিভি, দ্বিতীয় মাহা ফান টিভি, তৃতীয় যমুনা টিভি।
ভিডিও ভিউস র্যাংকে- প্রথম সময় টিভি, দ্বিতীয় যমুনা টিভি, তৃতীয় মাহা ফান টিভি।
এবং এসবি র্যাংকে- প্রথম যমুনা টিভি (১৪৩ তম), দ্বিতীয় সময় টিভি (১৮৫ তম)। মাহা ফান টিভি অনেক পেছনে। কারণ তাদের আপলোডকৃত ভিডিওর পরিমাণ অনেক কম, ফলে তাদের ভিউস র্যাংকও অনেক কম।
তবে উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনটি ইউটিউব চ্যানেল ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার পার করেছে এবং আমরা জানি ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হলেই ইউটিউব ‘ডায়মন্ড প্লে-বাটন’ ক্রিয়েটর অ্যাওয়ার্ড দেয়।
তবে এখানেও ছোট্ট একটি ভুল ধারণা আমাদের আছে। তা হলো ১০ মিলিয়ন মানেই কিন্তু ডায়মন্ড প্লে-বাটন অ্যাওয়ার্ড নয়, এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইউটিউবের একান্ত। ইউটিউব যদি মনে করে ১০ মিলিয়ন হওয়া সত্ত্বেও চ্যানেলটির রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ তাহলে তারা সেই অ্যাওয়ার্ড বাতিলও করে থাকে। তাই বাংলাদেশে এই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার তালিকায় কোয়ালিটি বিবেচনায় একমাত্র ‘সময় টিভিই’ পেয়েছে ডায়মন্ড প্লে-বাটন অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশে সময় টিভি ছাড়া অন্য কোনো ইউটিউব চ্যানেল এখন পর্যন্ত এই অ্যাওয়ার্ডটি পায়নি।
তবে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে ‘সময় টিভি’ বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রিয়েল টাইম দর্শক সংখ্যায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের (আল জাজিরা, স্কাই নিউজ, এনডিটিভি, ডি-ডব্লিউ, ব্লুমবার্গ, ইত্যাদি) সমান্তরালে রয়েছে সময় এর দর্শক।
তবে লক্ষ্যনীয়, খুব শিগগিরই আরও বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রিপশনের মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে, যেমন- অনুপম মুভি, ফারজানা ড্রয়িং একাডেমি, র্যাবিটহোল স্পোর্টস, ঈগল মিউজিক ভিডিও স্টেশন ইত্যাদি। হবু ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রিপশনের চ্যানেলগুলোর জন্য রইলো অগ্রীম শুভ কামনা।
লেখক: হেড অব ব্রডকাস্ট ও আইটি, সময় টিভি।
এএইচএস/