ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ভারতকে তালেবানি রাষ্ট্র হতে দেব না: মুসলিম নেতাদের শপথ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৭ পিএম, ২৯ জুন ২০২২ বুধবার

বিখ্যাত লেক পিচোলার তীরে উদয়পুর শহর।

বিখ্যাত লেক পিচোলার তীরে উদয়পুর শহর।

রাজস্থানের উদয়পুরে দুজন সন্ত্রাসী যুবকের হাতে একজন হিন্দু দর্জির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা অঙ্গীকার করছেন, ভারতে কিছুতেই তালেবানি সংস্কৃতিকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। 

ওই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও ভারতে কোথাও কোনও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়নি, এটাকেও অত্যন্ত ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকেলে উদয়পুরের ব্যস্ত ধান মান্ডি বাজারে প্রায় প্রকাশ্য দিবালোকে কানহাইলাল তেলি নামে একজন দর্জিকে কুপিয়ে খুন করে দুজন যুবক। কানহাইয়ালালের দোকানে তারা খরিদ্দার সেজে এসেছিল, তিনি যখন তাদের একজনের পোশাকের মাপ নিচ্ছেন তখনই তার ওপর অতর্কিতে ভোজালির কোপ মারে সেই ব্যক্তি। দর্জি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, রক্তে ভেসে যায় দোকান। অন্যজন গোটা ঘটনাটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করে।

পরে ওই দুই যুবক আরও একটি ভিডিও পোস্ট করে জানায়, কানহাইয়ালাল কিছুদিন আগে সাবেক বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে ফেসবুকে যে মন্তব্য করেছিলেন – তার বদলা নিতেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরেও হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় – যদিও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উভয়েই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সরিয়ে ফেলার আগে ইতোমধ্যে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সারা ভারতের কোটি কোটি মানুষ দেখে ফেলেছেন, আর ওদিকে গোটা রাজস্থান জুড়েই জারি করা হয়েছে কারফিউ। প্রতিটি জেলাতেই পুলিশ রয়েছে হাই অ্যালার্টে – তবে কোথাও এখনও বড় কোনও অশান্তির খবর নেই, এটাই স্বস্তির কথা।

এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রাজস্থানেরই পবিত্র আজমির শরিফ দরগার দেওয়ান জইনুল আবেদিন আলি খান বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে কোনও ধর্মই সমর্থন করে না। বিশেষ করে ইসলাম তো সব সময়ই শান্তির কথা বলে।’

আজমির শরিফ দরগার দেওয়ান জইনুল আবেদিন আলি খান।

সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে আমি সরকারকে আর্জি জানাব। আর এটাও বলব, ভারতের মুসলিমরা কখনোই তাদের মাতৃভূমির তালেবানিকরণ মেনে নেবে না।’

জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের মহাসচিব মহাসচিব হাকিমউদ্দিন কাশমিও বলেছেন, ‘কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা যায় না, আর ইসলাম তো করেই না। ভারতে একটা আইনের শাসন আছে, আর সেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার কারোরই নেই।’

বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরাও এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কেরালার বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী পিন্নারি বিজয়ন যেমন টুইট করেছেন, ‘আমরা (হিন্দু-মুসলিম) যে শান্তিতে একসঙ্গে বসবাস করছি, এই ধরনের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড শুধু সেই পরিবেশকেই বিনষ্ট করবে – আর কোনও কাজে আসবে না। সবাইকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানাব এবং বলব আইনকে তার কাজ করতে দিন।’

হায়দরাবাদভিত্তিক দল এআইএমআইএমের নেতা ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘এটা একটা জঘন্য আপরাধ। আইনকে কিছুতেই নিজের হাতে নেওয়া চলবে না, দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গেই বলব, নুপূর শর্মাকেও গ্রেফতার করা হোক।’

উদয়পুরের হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘উদয়পুরে যা ঘটেছে তার তীব্র বিরোধিতা করছি।’ একই সঙ্গে তার বার্তা, ‘হিংসা এবং চরমপন্থা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, তা যে কারণেই ঘটুক না কেন।’ 

এই সম্মিলিত নিন্দার ধ্বনির মধ্যেও উদয়পুরের হত্যাকাণ্ডের চরিত্র নিয়েও শুরু হয়েছে বিশেষজ্ঞদের কাঁটাছেঁড়া। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন আজাদ যেমন বলেছেন, ‘সত্যিকে সত্যি বলার সময় এসেছে। উদয়পুরে যে ভঙ্গীতে ও যে কায়দায় এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে তাতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর প্রভাব একেবারে স্পষ্ট।’

হত্যাকারী দুই যুবক আইএস বা অন্য কোনও জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) কর্মকর্তারাও গত রাতেই উদয়পুরের পথে রওনা হয়ে গেছেন। ভারতে এনআইএ সেই অপরাধগুলোরই তদন্ত করে থাকে যার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগ আছে – ফলে এটা স্পষ্ট উদয়পুরের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড’ হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে।

এসি