ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

প্রাণদণ্ড পাওয়া যুদ্ধাপরাধী আমিনুল গ্রেপ্তার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:২২ পিএম, ৩ জুলাই ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০১:২৮ পিএম, ৩ জুলাই ২০২২ রবিবার

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে থাকা কেএম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (২ জুলাই) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার র‍্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর কে এম আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। 

২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল আমিনুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত এই পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে অনেকদিন ধরেই গোয়েন্দা নজরদারী চারিয়ে যাচ্ছিল র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে গ্রেপ্তার করে। 

আমিনুল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় গণহত্যা, নির্যাতনসহ মনবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি। 

ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘর কলেজ শাখা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আমিনুল। 

র‌্যাবের বিজ্ঝপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমিনুল ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চণ্ডিপুর, কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও নির্যাতন করেন। এছাড়াও স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন।  

র‍্যাবের ভাষ্য, আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। সে সব মামলায় তার ৪০ বছর সাজা হয়, কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর ১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান যাতায়াত করেন। ১৯৯৭ সালে নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। 

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার ঠিকানা বদলান আমিনুল। আত্মগোপনে থাকার সময় তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। 

‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামে দুইটি বইও প্রকাশ করেছেন এই যুদ্ধরাপরাধী। 

এসব বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ বলে দাবি করেছেন তিনি।

২০১৪ সালে তার ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বই নিষিদ্ধ করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়।   

তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।
এএইচএস/ এসএ/