‘মূল্যস্ফীতি ও ডলার রেট ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪৫ পিএম, ৩ জুলাই ২০২২ রবিবার
মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলার রেট ধরে রাখায় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির। রোববার গভর্নরের শেষ কর্মদিবসে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারির পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ফজলে কবির তৃতীয় গভর্নর যাকে এভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় জানানো হলো। ১১তম গর্ভনর হিসেবে ৬ বছর ৩ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন গভর্নরের সহধর্মিনী সাবেক সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ও
ডেপুটি গর্ভনররা।
বিদায়ী গভর্নর বলেন, 'দেখতে দেখতে ৬ বছর ৩ মাস পার হয়ে গেলো। আমার মনে হয় এই সেদিন মধ্যরাতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ফোনে বললেন "সো ইউ আর দি গভর্নর।
তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলার রেট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ রেখে যাচ্ছি। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এটা ঠিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।'
ফজলে কবির বলেন, 'ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করা হলে সবাই সমালোচনা করে বলেছিল, এটা সম্ভব না। এরপর মুদ্রানীতিতে এখন নীতি সুদহার বাড়ানো হলেও অনেকে একই কথা বলছেন। তারা বলছেন, ঋণের একক সুদহার তুলে না নিলে নীতি সুদ বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। '
'কিন্তু আমি মনে করি এটা কার্যকর সিদ্ধান্ত। যা প্রধান অর্থনীতিবিদ, ডেপুটি গভর্নররা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করছি।'
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফজলে কবিবের কর্ম জীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
তিনি বলেন, 'আমি ৪২ বছর যে ঘোড়ায় চড়ে আসছি সেই ঘোড়াটাকে একটু রেস্ট দিব। আমি রেস্ট নিব। তারপর আবার সেই আমি ঘোড়ায় চড়ে সূর্যাস্তের দিকে চলে যাব।
বিদায়ী গভর্নর বলেন, 'আপনারা আমার সম্পর্কে যা বলেছেন সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৬ বছর ৩ মাসের দায়িত্ব প্রসঙ্গে বিদায়ী গভর্নর বলেন, 'এখানে সবার কাজ খুব উন্নতমানের। এর মধ্যে অনেকে অতি মেধাবী আছেন। এটা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে আমি পাইনি। সবাই কাজ নিবেদিতভাবে করেন। সবাই কাজ খুব উপভোগ করেই করে। সবার ভালোবাসা আমি পেয়েছি৷'
তিনি বলেন, 'আমার এখন বিশ্রাম দরকার। বিশ্রামে তো এখনো আছি।কিন্তু টেনশনমুক্ত বিশ্রাম দরকার।'
গভর্নরের সহধর্মিনী মাহমুদা শারমীন বেনু বলেন,'আমার পেশাগত জীবনে কারও বিদায়ে এমন অনেকবার বক্তব্য রেখেছি। কিন্তু আজ সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখা ব্যতিক্রম। যে কোনো বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য আবেগময়।'
ব্যক্তিজীবনে ফজলে কবির কেমন? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'তিনি বাইরেও যেমন, ভেতরেও তেমন। এক ও অভিন্ন। তিনি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে একজন মানবিক মানুষ। তার অফিসকে কখনো পরিবারের মধ্যে নিয়ে আসেননি।পরিবারে তিনি আমাদের কর্তা। বাসার সবার বিষয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।'
তিনি বলেন, 'আমি কবিতা লিখি সেটার প্রথম পাঠকও তিনি। আমার লেখার কোনো সংশোধন থাকলে তিনি সেটা বলেন।'
গভর্নরকে নিয়ে বক্তারা বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর খুব ক্রান্তিলগ্নে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনা ফজলে কবির আগে খতিয়ে দেখেছেন। মূল ঘটনা সবার সামনে এনেছেন।'
তারা আরও বলেন, ' ফজলে কবির তার সময়ে অনেক নীতিমালা জারি করেছেন। এ কারণে অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে। '
'করোনার সময়ে তিনি দক্ষতার সাথে বিভিন্ন প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছেন। করোনায় ব্যাংকাররা মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। পরিবারকে টাকা দেয়ার জন্য বারবার তাগাদা করেছেন। ফলে ১৮৯ জন ব্যাংকার করোনায় মারা গেছেন, তাদের প্রত্যেক পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে। '
'তিনি মানবিক মানুষ। সমস্যা সমাধানে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। ব্যাংকারদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো করেছেন। এজন্য সবাই আমরা কৃতজ্ঞ।'
২০১৬ সালে চার বছরের জন্য গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির। সেই হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।
তবে এর ৩৪ দিন আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন।
ফজলে কবিরের ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। তার আগেই মে মাসে তার দায়িত্বের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়।
অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১২ জুলাই তিনি যোগদান করবেন।
এসময় নির্বাহী পরিচালক ও ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেআই//