উচ্চ রক্তচাপ: আক্রান্তদের অর্ধেকই অবগত থাকেন না (ভিডিও)
প্রণব চক্রবর্তী
প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ১১ জুলাই ২০২২ সোমবার
দেশে তিন কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারে আক্রান্ত। আক্রান্তদের অর্ধেকেই জানেনই না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে বাড়ছে মৃত্যুহার। সহজে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলেও অনেক হাসপাতালে নেই রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বলছে, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৮ বছরের বেশি জনসংখ্যা ১১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার। সে হিসাবে ৩ কোটির বেশি মানুষ এই দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত।
উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকিতে পঞ্চাশোর্ধ্বরা থাকলেও খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মানুষের আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যক্ষ ডা. মেসকাত আহমেদ চৌধুরী একুশে টেলিভিশনকে বলেন, “আমাদের পপুলেশনের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি ১০ থেকে ২০ বছরেরও বেশ রোগী আসছে আমাদের কাছে উচ্চ রক্তচাপের প্রবলেম নিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব রোগীরা শহরের।
“এখন তো অনলাইনে খাবার বাসায় নিয়ে আসার সুযোগ আছে তাদের। সেগুলোই তারা বেশিরভাগ ব্যবহার করে এবং এ সমস্ত রোগীদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ হয় তাদের কায়িক পরিশ্রমের কোনো ইতিহাসই খুঁজে পাওয়া যায়না।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশিই জানেন না, তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপে দেখা দিচ্ছে হৃদরোগ, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, কিডনি জটিলতাসহ নানা ব্যাধি।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “হাইপার টেনশন একটি কারণ, যার কারণে আমরা বড় বড় তিন তিনটি রোগে ভুগব।
“আপনি হয়ত বার বার প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নেন, হয়ত উনি খুঁজে বের করবেন, এটা ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো কারণ কিনা, কিডনির কারণে হতে পারে। তখন খুঁজতে গিয়ে দেখা যাবে আপনি হাইপার টেনশনে ভুগছেন “
এ ব্যাধিতে সারা জীবনই ওষুধ খেতে হয়, চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি। তবে নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাবনে ৮০ শতাংশ হৃদরোগ এবং ৭৩ শতাংশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “এই প্রেসারের (রোগী) একটি বিশাল অংশ কিন্তু চিকিৎসানির্ভর নয়। যেখানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, যেমন লবণজাতীয় খার পরিহার করা, আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণ সবজি-ফলমূল খেতে হবে। মাছ বেশি খেতে হবে, তৈলাক্ত-চর্বিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।”
আর ডা. মেসকাত বলছেন, “ওইভাবে আপনি যদি ডায়াটেরি অ্যাডভাইজ দিতে চান তাহলে হয়ত খুব বেশি ইফেক্টিভ হবে না। বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এখন হাঁটা থুক প্রয়োজন। গ্রামে যেটা হচ্ছে, রাস্তাঘাট ভালো হওয়ায় গ্রামের লোকজন আগের তুলনায় এখন কম হাঁটছে। গ্রামেগঞ্জে ডিশের লাইন পৌঁছে যাওয়া লোকজন ঘরে বেশি ডিশ দেখতেই এখন বেশি অভ্যস্ত। তাদের সোশাল লাইফও চেঞ্জ হয়ে গেছে।”
তবে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলেও অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নেই রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা।
এএইচএস/